ডেস্ক রিপোর্ট
জেলাব্যাপী বিরাজ করছে টেকনোলজিস্ট সংকট। এতে করে অজানা থেকে যাচ্ছে করোনা সংক্রামণ রোগীর সংখ্যা। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে ল্যাব পর্যায়ে পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ রোগ নির্ণয় করতে ভূমিকা থাকে ল্যাব টেকনোলজিস্টদের। কিন্তু কক্সবাজারে এই সংকটময় মুহুর্তে ল্যাব টেকনোলজিস্টদের অপ্রতুল অবস্থা জেলাবাসীকে আরও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলার প্রত্যেকটিতে রয়েছেন ১ জন করে ল্যাব টেকনোলজিস্ট। এরমধ্যে কক্সবাজার সদরে রয়েছে ২ জন। মোট ৯ জন টেকনোলজিস্টদের মাধ্যমে পুরো জেলার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। জেলার ৭১টি ইউনিয়নের বিশাল এই জনগোষ্টির করোনা সংক্রমণ রোগ নির্ণয়ে যা খুবই অপ্রতুল।
কক্সবাজারে কর্মরত ল্যাব টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ইতিমধ্যে উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক ল্যাব টেকনোলজিস্টদের দৈনিক ১০ থেকে ২০টি স্যাম্পল কালেকশনের জন্য বলা হয়েছে। একজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট মাঠ পর্যায়ে গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন, তা ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ল্যাব টেকনোলজিস্টদের প্রস্তুতি সহ দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ১০ বা ২০ জন রোগীর পেছনে কতটা সময় লাগবে তা সহজে বুঝা যায়। আর একটি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করতে শুধু ১ জন নয় বেশ কয়েকজনের ল্যাব টেকনোলজিস্টের প্রয়োজন পড়ে।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন রোগ নির্ণয় তথা সংশ্লিষ্ট রোগের রোগী শনাক্তের জন্য অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্টের প্রয়োজন হয়। কক্সবাজারে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের প্রতুল অবস্থা দীর্ঘদিনের। কিন্তু অতীতের সময়ের চাইতে বর্তমানে অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না বাড়ালে ভয়াবহ বিপদ হবে। কারণ টেস্ট না বাড়াতে পারলে করোনার রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। করোনা পরীক্ষাটি খুবই সংবেদনশীল। সংগ্রহ থেকে শুরু করে যথাযথ পরীক্ষা হলো কি না, সতর্ক থাকতে হয়। তাড়াহুড়ো কিংবা কাজের চাপে ভুল করে নেগেটিভ এলে সমাজে আরও বিপদ ডেকে আনবে। এ জন্য দক্ষ ও পর্যাপ্ত লোকবলের বিকল্প নেই।
ডাক্তাররা আরো জানিয়েছেন, একজনের পক্ষে অতিরিক্ত কাজ করতে গেলে কাজের চাপে ফলাফল অনেক সময় নেগেটিভ আসতে পারে। অন্যদিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা পাচ্ছে না। তাদেরকে পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক দেয়া হচ্ছে না। করোনা শনাক্ত করতে যাওয়ায় টেকনোলজিস্টরা অনেক সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারেও করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর হার বাড়তে থাকলে শনাক্ত করতে যাওয়া মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। এই অবস্থায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বাড়ানো না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিৎ যেকোন উপায়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই পদে শীঘ্রই নিয়োগ দেয়া দরকার।
এদিকে কক্সবাজার জেলা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রিয় কমিটির বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক দিল মোঃ শাহ আলম জানান, কক্সবাজারে অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অপ্রতুল। তার উপর দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলিজস্ট পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। যেকোন রোগ নির্ণয় করার জন্য অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্টের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈশ্বয়িক প্রাদুর্ভাব করোনা রোগ শনাক্ত করার জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, কক্সবাজার জেলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এই পদে রয়েছে মাত্র ৯ জন। তাও আবার প্রতি উপজেলায় একজনের দায়িত্ব। বৃহত্তর জনগোষ্টীর জন্য এই অপ্রতুল টেকনোলজিস্ট দিয়ে সঠিকভাবে রোগ শনাক্ত করা খুবই কষ্টকর। যে ক’জন টেকনোলজিস্ট রয়েছে তাদের কাছে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম, এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই সহ চিকিৎসা সরঞ্জাম। যে কয়েকটি পিপিই প্রদান করা হয়েছে সেগুলো বার বার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এগুলো থেকেও আরও বেশি সংক্রমনিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আমরা বার বার দাবি করে আসছি রোগ নির্ণয়ের সুবিধার্থে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়ার জন্য। তারপরও সরকারের নির্দেশনা মতে ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সংকটময় সময়ে কক্সবাজার জেলাবাসীকে সুষ্ঠুভাবে সেবা দেয়ার জন্য আমরা একটি টিম গঠন করেছি। যেকোন মুহুর্তে ওই টিমকে কাজে লাগানো হবে। আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি, সামনের সময়গুলোকে মোকাবেলা করার জন্য জরুরি ভিতিত্তে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়ার জন্য।