ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩১/০৫/২০২৩ ৬:৪৬ এএম

বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত, রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী খুব শিগগিরই ‘নতুন ফিলিস্তিনিতে’ পরিণত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অলিভিয়ার ডি শাটার।

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে ব্রিটেনের গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ‘একেবারে ভয়াবহ’ পরিস্থিতি হিসাবে উল্লেখ করে, তিনি অবহেলিত এ সংকটের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ার ডি শুটার বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ‘নতুন ফিলিস্তিনি’ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলছেন, তারা বেশ দীর্ঘ এবং ক্রমবর্ধমান অবহেলিত সংকটের মধ্যে আটকা পড়ে গেছেন।

শুটার বলেন, কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শিবিরে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তাদের আশ্রয়দানকারী দেশ বাংলাদেশে কাজ করার অধিকার দেওয়া উচিত। ক্রমহ্রাসমান আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর তাদের নির্ভরশীল হতে বাধ্য করাটা মোটেও স্থিতিশীল নয়।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি ‘খুবই ভয়াবহ’। ‘এমন মরিয়া পরিস্থিতিতে’ থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ তার খুব একটা হয়ে ওঠেনি। শুটার বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের স্থানীয়দের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। তাদের রাখা হয়েছে নোংরা, সংকুচিত আশ্রয়স্থলে। পাঁচ বছরেরও বেশি আগে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সহিংসতা আন্তর্জাতিক ক্ষোভকে উসকে দিয়েছিল।

এর ফলে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে একটি গণহত্যা মামলাও করা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক দাতারা এখন অন্য নানা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, তহবিল সংকটের কারণে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য বাবদ বরাদ্দ প্রতি মাসে মাত্র ৮ মার্কিন ডলারে (৬ দশমিক ৫০ পাউন্ড) কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।

শুটার বলেন, আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ের উচ্চ খাদ্যমূল্যের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে একে যুক্ত করেন, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় বছরের শুরুর তুলনায়, শরণার্থীদের ক্যালোরি গ্রহণ এবং পুষ্টির মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। শিশুদের জন্য অপুষ্টি এবং অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।

তবে সব থেকে ভয়াবহ দিক হচ্ছে, এই মানুষগুলো বাঁচার জন্য পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাদের কাজ করা নিষিদ্ধ। তারা একেবারে একটা জায়গায় আটকে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শুটার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লোকজন একেবারে শুয়ে বসে অলসতায় দিন কাটায়।

ফলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বাড়ছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে। সশস্ত্র গ্যাং মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আর এসব পরিবারের হতাশার অবস্থাকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না।

সেখানকার বাসিন্দারা ক্রমাগত বৈরী আবহাওয়ার মোকাবিলা করছে। তারা কংক্রিটের কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন বলে সেখানে নিয়ম রয়েছে। তাই তাদের বাঁশ এবং টারপলিনের আশ্রয়ে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে শুটার জানান।

শুটার বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের কাজ করার অনুমতি দিলে তারা এখানে আরও বেশি সময় থাকতে উৎসাহিত হবে। এতে জনসেবার ওপর চাপ বাড়বে এবং অন্যদের চাকরির সুযোগ হ্রাস পাবে।

এ ধারণাকে ভুল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তারা কাজ করতে পারে, তাহলে তারা কর দেবে, তারা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারবে যা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। তিনি বলেন, সব মানুষেরই জীবিকা অর্জনের অধিকার রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে মিয়ানমারের জান্তাকে চাপ দিতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করেছে এবং শরণার্থীদের সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়নের সংকটেরও ইঙ্গিত করেছে।

এই মাসের শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফরে গিয়েছিল। ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরার আশা আরও কমে গেছে।

শুটার বলেন, সঠিক পরিস্থিতিতে নিরাপদে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা যায় এমন পরিস্থিতি তৈরির জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আপাতত কেউ মনে করেন না যে, সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট রাডারের অনেক নিচে নেমে গেছে। এক্ষেত্রে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মনোযোগ একান্তভাবে প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় এই লোকজন ১০ বছরের মধ্যে নতুন ফিলিস্তিনিতে পরিণত হবে। সুত্র: যুগান্তর

পাঠকের মতামত

ইরানের ভয়ে তটস্থ ইসরায়েল!

ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা আসন্ন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ...