ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন এক ছাত্রীকে রাতভর র‌্যাগিং ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত র‌্যাগিং করা হয় বলে জানা গেছে। এসময় ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণসহ নানাভাবে নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরি খাতুন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাবাসসুম নামের আমার বিভাগের এক সিনিয়র আপু রুমে দেখা করতে বলেন। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে আপুর রুমে যেতে পারিনি। পরে রুমে ডেকে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন এবং হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। শনিবার রাতে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়। পরে রোববার বিকেলে হল প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রক্টরের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা হয়।

রোববার রাত ১১টার দিকে অন্তরা আপুসহ ৭-৮ জন আমাকে একটি গণরুমে নিয়ে যান এবং রুমে নিয়ে গিয়ে কথায় কথায় ওনারা সাত-আটজন মিলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। আর আমি কান্না করে ওনাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে লাথি মারেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে গামছা গলায় পেচিয়ে টেনে ধরে রাখেন। একপর্যায়ে তারা একটা ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করায়ে নেন এবং সেটার ভিডিও ধারণ করে। তারপর তারা আমাকে জামা খুলতে বলেন। আমি জামা না খুললে আবার মারধর শুরু করেন এবং আমার জামা খুলে জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।

তারপর আমাকে বলেন, ‘যদি বাইরের কাউকে একথা বলিস, তাহলে তোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দিব। যাতে তুই কাউকে মুখ দেখাতে না পারিস। আর প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ দিলে তোকে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো, যা বলেছি তা মনে থাকে যেন।’ পরেরদিন ভোরে জীবনের ভয়ে আমি হল থেকে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।

এদিকে, এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে সোমবার রাতে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর পক্ষে মধ্যরাতে আবাসিক হলে ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল ছাত্রী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ওই মেয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। ও আমাকে চেনেও না। নবীন ওই ছাত্রী ওর এক ভাইকে দিয়ে ওর বিভাগের সিনিয়রকে (তাবাসসুম) হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। পরে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়। ওই মেয়ে মুচলেকা দেয়। পরের দিনের র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, উভয় পক্ষ অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবেই র‌্যাগিং অ্যালাউ করা যায় না। এটি একটি অপরাধ। অভিযোগ সত্য হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।