প্রকাশিত: ০৪/০৭/২০২১ ৭:৪৮ পিএম

চিকিৎসককে জরিমানা করে আলোচনায় আসা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রোববার বিকেলে ৪টার দিকে তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইউএনও নজরুলের প্রত্যাহারের আদেশ আসে। তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার জায়গায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম।’

সাতকানিয়ায় নিজ চেম্বারে শুক্রবার সন্ধ্যায় জরুরি ভিত্তিতে রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন চিকিৎসক ফরহাদ কবির। তাকে সদরের কলেজ রোডের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শনিবার রাতে নিউজবাংলাকে ঘটনার বিস্তারিত জানান সাতকানিয়ার আলফা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের চিকিৎসক ফরহাদ কবির।

ফরহাদ কবির বলেন, ‘আমি সাধারণত শুক্রবারে চেম্বার করি না। তবে ওই দিন চেম্বারে এক ইমার্জেন্সি রোগী এসেছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি করে রোগী দেখার উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হই। কলেজ রোডের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে থামালে আমি পেশাগত পরিচয় দিই। তা সত্ত্বেও তারা আমার মোটরসাইকেলের চাবিটি নিয়ে আমাকে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

‘এ সময় ইউএনওকে আমার পেশাগত পরিচয় দিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে কয়েকটি কুরুচিপূর্ণ শব্দ বলেন এবং বেশি কথা বললে জেলে নেয়ার হুমকি দেন।’

আরও পড়ুন: এবার চট্টগ্রামে চিকিৎসককে হেনস্তার অভিযোগ
ডা. ফরহাদ বলেন, ‘জেলে নেয়ার কথা বলায় ঝামেলা না বাড়িয়ে আমার কোনো দোষ থাকলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করি। এতে তিনি আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান। আমার কাছে দুই হাজার টাকা নেই জানালে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সাতকানিয়ার আলফা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের চিকিৎসক ফরহাদ কবির। ছবি: সংগৃহীত
‘এ সময় তার সহযোগীদের মামলার কাগজে খুব বাজেভাবে আমার নামের আগে ডা. শব্দটি বড় করে লিখতে বলেন তিনি, যেন ডাক্তারকেও ফাইন করা হয়েছে সেটা সবাইকে দেখানো যায়।’

তিনি আরও জানান, ইউএনও বলেছেন, ‘আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না।’

ফরহাদ বলেন ‘চিকিৎসক অন্যায় করে জরিমানা খেয়েছে বলে তা পত্রিকায় দেয়ার জন্য আমার ছবি তুলে রাখেন এবং আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেন তিনি।’

এ বিষয়ে সাতকানিয়ার ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ওই সময় আমার সঙ্গে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসাথে সাত-আটটি মোটরসাইকেল আটক করে। তিনি যে চিকিৎসক আমরা সেটি নিশ্চিত হতে পারিনি। কারণ আমরা তার কাছে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চাইলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। এমনকি তার মাস্ক ও হেলমেট পর্যন্ত ছিল না। তিনি নিজেই অন্যায় স্বীকার করে জরিমানা করতে বলেছেন।’

ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকি এবং কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেছিলেন, ‘আমরা তো ইচ্ছে করে রাস্তায় নেমে সারা দিন খাটছি না। আমরা সরকারি নির্দেশ পালন করতে রাস্তায় নামছি। এ সময় কেউ ওই চিকিৎসককে জেলে নেয়ার হুমকি দেননি। কোনো কুরুচিপূর্ণ শব্দও কেউ ব্যবহার করেনি। আর তিনি যদি মনে করেন তার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে তিনি তো ডিসি স্যারের কাছে রিভিউ করতে পারেন, আমরা তো কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না।’

মাস্ক, হেলমেট, আইডি কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে ডা. ফরহাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি ইমার্জেন্সি একটা রোগী দেখতে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমি তাড়াহুড়ার মধ্যে ছিলাম। তাই কিছু নেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তবে মাস্কের বিষয়টা অসত্য। তারা আমার ছবি তুলেছে, ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আমার মাস্ক ছিল কি না। এমনকি ছবি তোলার সময় মাস্ক নিচে নামাতে বাধ্য করেছিলেন তারা।’

এ বিষয়ে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...