উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭/১০/২০২২ ৯:৫০ পিএম

আবারও পেছানো হয়েছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। চতুর্থবারের মত নির্ধারিত দিন ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। জেলা পরিষদ নির্বাচনের অজুহাত তুলে ২০ অক্টোবর সম্মেলন আয়োজন করছেন না সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক দল ২০ অক্টোবরের আগে জেলা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন করার জন্য ইতোপূর্বে তিনবার দিন-তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ক্রমাগত নিস্পৃহা ও অনীহার কারণে সম্মেলন ও কাউন্সিল হয়নি এমন অভিমত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। এমতাবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে কক্সবাজার জেলা সম্মেলন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কীনা এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সম্মেলনের তারিখ বার বার পেছানোর কারণে জেলার আওতাধীন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওর্য়াড পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা-সংগঠক ও কর্মীরা যুগপৎ ক্ষুব্দ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন এমন অভিমত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাড়ে আট মাস পর ১৩ অক্টোবর ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে মনোনীত সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ৫বছর দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই কমিটিতে পরিবর্তন আসে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫ নবেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করেন। সিরাজুল মোস্তফার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় অনুমোদিত জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতির তালিকায় পেছনে থাকা ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে। নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অভিযোগ ওঠছে যে, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের গঠনতন্ত্র মতে দল পরিচালনা না করে অনেকটা নিজেদের মর্জিমাফিক পরিচালনা করছেন।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন সাংগঠনিক উপজেলা হচ্ছে ১১টি। সেগুলো হলো- চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, মাতামুহুরী, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার পৌরসভা। ১১টি উপজেলার মধ্যে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উপস্থিতিতে ইতোপূর্বে সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে পেকুয়া, চকরিয়া, মাতামুহুরী, কক্সবাজার পৌরসভা, উখিয়া ও টেকনাফে। বার বার সময় নির্ধারণ করার পরও নানাবিধ সমস্যা ও জটিলতার কারণে কাউন্সিল ও সম্মেলন হয়নি রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়।

গত ১২ সেপ্টেম্বর ঈদগাঁও উপজেলার কাউন্সিল ও সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছিল বটে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ও কক্সবাজার পৌঁছে ছিলেন সম্মেলনে যোগদানের জন্য। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা বাকী থাকতেই দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর জ্যৈষ্ঠ সদস্য সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুজনিত কারণে ওই সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও ঈদগাঁও উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৮ থেকে ১১ অক্টোবর। ওই দিন-তারিখ নির্ধারণ করে দেন কক্সবাজার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। কিন্তু ওই নির্ধারিত তারিখেও জেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে উল্লেখিত চার উপজেলার সম্মেলন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা সম্মেলনকে সামনে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য পাঁচ থেকে ছয়জন নেতা প্রকাশ্যে ও আড়ালে-অবড়ালে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। পাঁচ-ছয়জন নেতার মধ্যে প্রচারণা, গ্রহণযোগ্যতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, ত্যাগ, অভিজ্ঞতা সবকিছু মিলিয়ে এগিয়ে আছেন সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী আইনজীবী রনজিত দাশ। তিনি বর্তমানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতাদের পছন্দের তালিকায়ও তিনি রয়েছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের পছন্দের তালিকায় শিরোভাগে রয়েছেন এই সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী অপর দুইজন হচ্ছেন বর্তমান জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, প্রচার সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান প্রকাশ্যে তৎপর না হলেও তিনি সভাপতি পদ পেতে আগ্রহী বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও ভারমুক্ত হয়ে সভাপতি হতে চান। যে যতো কথাই বলুক, জেলার নেতৃত্ব পাবার জন্য নেতারা যে যেভাবেই তৎপরতা চালাক না কেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্ব কাদের উপর দেয়া হবে শেষ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত করবেন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- এমনই বলছেন দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

তারা বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশ। নেতৃবৃন্দ দলীয় কর্মকান্ডের চেয়ে ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশীরভাগ সময় পার করেছেন। এ অবস্থার কারণে দল গোছাতে হলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব আসুক-এমনটাই কামনা করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সুত্র: জনকন্ঠ

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ আওয়ামীলীগ

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...