কথা ছিল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি বন্দরনগরী থেকেও চলবে নিয়মিত ট্রেন। তবে ঢাকা থেকে প্রতিদিন দুটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন চললেও চট্টগ্রাম থেকে এখনও নিয়মিত ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। তাই ঈদ উপলক্ষে যে বিশেষ ট্রেন চলছে, সেটিকে নিয়মিত করার দাবি উঠেছে। একটি বিশেষ ট্রেন চলতেই কমে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথের বাস ভাড়া নৈরাজ্য। অনেক বাস সার্ভিস ভাড়া কমিয়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে নিয়মিত ও স্থায়ী ট্রেন চালুর বিষয়টি এখন এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দুই জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছেন। দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে রেলপথ অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে এরই মধ্যে মানুষের প্রত্যাশা ও লাভের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ট্রেনটিকে নিয়মিত করতে মহাপরিচালক কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ‘কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল’ নামে একটি ট্রেন চালু করা হয়েছিল। তবে ইঞ্জিন ও জনবল সংকট দেখিয়ে গত ৩০ মে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১২ জুন থেকে স্পেশাল ট্রেনটি ফের চালু করে গত সোমবার বন্ধ হয়ে যায়। তবে চাপে পড়ে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত এক মাস সময় বাড়ায় রেলওয়ে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী স্পেশাল ট্রেন থেকে লাভ পাচ্ছে রেলওয়ের। তবে ইঞ্জিনসহ লোকবল সংকটের কারণে ট্রেনটিকে নিয়মিত করা যাচ্ছে না। তবে সংকট নিরসন করে ট্রেনটিকে নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য রেলওয়ের মহাপরিচালক কার্যালয়ে আমরা একটি প্রস্তাবনাও দিয়ে রেখেছি।’
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেলপথ গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর গত ১ ডিসেম্বর থেকে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ট্রেন চলাচল শুরু করে। চলতি বছর ১০ জানুয়ারি ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামে আরেকটি ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। এ দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে শুধু ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য।
স্পেশাল ট্রেনেই কমছে বাস ভাড়া নৈরাজ্য
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে ট্রেন চালুর কারণে এ রুটে চলাচলকারী বাসের নৈরাজ্য ও দাপট কমতে শুরু করে। ট্রেনটি চালুর পর অনেক পরিবহন সার্ভিসই ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়। ইতোমধ্যে দুটি পরিবহন সার্ভিস ১০০ টাকা করে ভাড়া কমিয়েছে। পরিবহন মালিকরাও বলছেন, প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ায় ভাড়া কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথে সৌদিয়া পরিবহনে আগের ভাড়া ছিল ৪২০ টাকা। এখন তা ৩৩০ টাকা করা হয়েছে। পূরবী পরিবহনও এ রুটে ১০০ টাকা ভাড়া কমিয়ে ৩২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অন্য বাস সার্ভিসও ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে অনেক কম। সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা।
নিয়মিত ট্রেন চালুর দাবি
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত লোকাল ও বিরতিহীন ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন এ দুই জেলার মানুষ। ইতোমধ্যে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে রেলওয়ের মহাপরিচালক ও পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে নিয়মিত ট্রেনের দাবিতে স্মারকলিপিও দিয়েছে। দাবি আদায়ে ২৩ জুন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে স্পেশাল ট্রেনটিকে নিয়মিত করার দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে নিয়মিত ট্রেন চালুর কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। আমরা চাই, ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি যেন নিয়মিত চলাচল করুক। অন্যথায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, এ পথে নিয়মিত ট্রেন চালু করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে রেল কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে