প্রকাশিত: ০৫/০৬/২০২২ ১০:৩০ এএম

মালদ্বীপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. নাজনীন আনোয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে মালদ্বীপ সরকার। সম্প্রতি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মুহাম্মদ সলিহ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
সভায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মুহাম্মদ সলিহ বলেন, মালদ্বীপের করোনাকালীন সঙ্কট উত্তরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ডা. নাজনীন আনোয়ার এবং তার প্রতিষ্ঠানের কাছে মালদ্বীপ সরকার এবং জনগণ চিরকৃতজ্ঞ। ডা. নাজনীন আনোয়ার বলেন, করোনাকালে মালদ্বীপ সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির ৭০ শতাংশ জনগণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা বড় একটি কাজ। মালদ্বীপ এ অঞ্চলের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এই কাজটি করেছে। প্রেসিডেন্ট সলিহ দেশটির পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের উন্নয়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবদান স্মরণ করেন। ভবিষ্যতে যেসব অঞ্চলে আরো বেশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহযোগিতা প্রয়োজন সে ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন। এর জবাবে ডা. নাজনীন আনোয়ার সেসব অঞ্চলে অভিজ্ঞ মনস্তত্ববিদের অপ্রতুলতা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবের উপর আলোকপাত করেন। এ ব্যাপারে হু মেন্টাল হেলথ একশন নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করছে বলে সভায় জানান তিনি।
তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাথে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল লেভেলের শিক্ষা কারিকুলাম এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ডা. নাজনীন আনোয়ার গত ৮ এপ্রিল মালদ্বীপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে মনোনীত হন এবং ১৮ এপ্রিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসিয়াল পরিচয়পত্র উপস্থাপন করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নারী- যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পদে মনোনীত হয়েছেন।
ডা. নাজনীন আনোয়ারের মানসিক স্বাস্থ্যসহ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পেশাগত এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য নীতি, পরিকল্পনা এবং সক্ষমতা বিকাশ, অসংক্রামক রোগ, পুষ্টি, ভ্যাকসিন প্রতিরোধযোগ্য রোগ, অক্ষমতা প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রভৃতি।
তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অফিস, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি অফিস এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন।
ডা. নাজনীন আনোয়ার ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি অফিস বাংলাদেশে জাতীয় পরামর্শক হিসাবে যোগদান করেছিলেন। এরপর ভারতের নয়াদিল্লিস্থ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক অফিসে প্রথমে টেকনিক্যাল অফিসার এবং পরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ডা. নাজনীন আনোয়ারের বাবা মরহুম মাহবুব আলম আনোয়ার ছিলেন আগ্রাবাদ চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (বর্তমান এফআইসিসিআই, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ)। তার এক মামা সম্প্রতি প্রয়াত প্রখ্যাত অধ্যাপক ডা. আমিনুল ইসলাম। আর এক মামা প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার মইনুল ইসলাম কাপ্তাই হাইড্রো পাওয়ার জেনারেশন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তার স্বামী রেহান নিজাম পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব মরহুম ও আর নিজামের কনিষ্ঠ পুত্র।
ডা. নাজনীন আনোয়ার তার বাবা-মা’র সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী ডা. নাজনীন চট্টগ্রামের সেন্ট স্কলাস্টিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

পাঠকের মতামত