নিউজ ডেস্ক::
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার সত্তরোর্ধ এক নারীসহ দুইজনের দাফন কাজে কেউই এগিয়ে আসেননি। একজনের লাশ হাসপাতালে পড়ে থাকলেও সন্তান-সন্ততি, পরিবারের সদস্য, নিটকাত্মীয়সহ কোন স্বজনই এগিয়ে যাননি লাশ গ্রহণ করতে।
এই পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজের অনুরোধে লাশ দাফনে এগিয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন ‘স্বাধীন মঞ্চ’র তিন কর্মী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুইজন সুপারভাইজার। এই পাঁচজনের সমন্বয়ে চকরিয়াতে শুরু হয়েছে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জানাজা-দাফনকার্য।
তাদের এই মানবিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। প্রশংসায় পঞ্চমূখ হয়ে উঠেন দাফন কাজে অংশ নেয়া প্রত্যেকে।
জানাজা-দাফনে অংশগ্রহণ করা ‘স্বাধীন মঞ্চ’র তিন কর্মী হলেন যথাক্রমে উপ-সমন্বয়ক সৌরভ মাহাবী, সরওয়ার ইমরান ও জায়েদ হোসেন নয়ন। আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুইজন হলেন মাওলানা আমির হোসেন ও হাফেজ মাহবুবুল আলম।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন বা সৎকার নিয়ে দেশে ইতোমধ্যে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সংক্রমণের ভয়ে সন্তান পর্যন্ত কাছে যাচ্ছেন না। লাশ দাফন করতেও অপারগতা দেখাচ্ছেন স্বজনরা। এই পরিস্থিতিতে চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা মাদ্রাসা পাড়ার মরহুম এনামুল হক চৌধুরীর স্ত্রী জওশন আরা (৭০) করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার আনোয়ার খাঁন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সেই লাশটি গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও কেউই এগিয়ে আসেননি। শেষ পর্যন্ত ‘স্বাধীন মঞ্চ’ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৫ জনের দল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জানাজা শেষে দাফন কাজ শেষ করেন।
সূত্র জানান, একইরাতে চকরিয়া আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান করোনা আক্রান্ত চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার ফজল করিমের ছেলে নুরুল ইসলাম (৫২)। কিন্তু তাঁর লাশ দাফন করা তো দূরের কথা, বারবার তাগাদা দেয়ার পরও হাসপাতাল থেকে কেউ লাশ পর্যন্ত গ্রহণ করতে যাননি। এই অবস্থায় আজ শুক্রবার সকালে ‘স্বাধীন মঞ্চ’ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দলটি করোনায় মৃত নুরুল ইসলামের জানাজা-দাফন কাজে অংশ নেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বাধীন মঞ্চ’ স্থায়ী পরিষদ সদস্য তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন কক্সবাজার ভিশন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছি, করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে স্বজনরাও জানাজা-দাফনে এগিয়ে আসবে না। তাই সামাজিক অন্যান্য কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনের বিষয়টি মাথায় রেখে ‘স্বাধীন মঞ্চ’ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে রাখি। তারাই আজ উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে মানুষের শেষ বিদায়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। এতে আমরাও গর্ববোধ করছি, শেষ বিদায়ের সময় স্বাধীন মঞ্চের সদস্যরা সঙ্গি হতে পেরে।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াটা কোন অপরাধ নয়। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে আপন ছেলে থেকে শুরু করে একেবারে কাছের স্বজনরাও দাফন কাজে অপারগতা প্রকাশ করায় এগিয়ে এসেছে স্বাধীন মঞ্চের কর্মীরা।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য স্বাধীন মঞ্চ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যারা মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই মহতি কাজে আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’