হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::
টেকনাফের হ্নীলায় রোহিঙ্গারা রাতের আধাঁরে অংশীদারিত্বে সৃজিত ৭৫ একর সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করার প্রতিবাদে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার ৭ ডিসেম্বর সামাজিক বনায়নের অংশীদারগণ ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশণার (আরআরআরসি), কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ বরাবরে লিখিত আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে ৭৫ জন উপকারভোগীদের পক্ষে স্থানীয় মেম্বার ও উপকারভোগী মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষর করেছেন।
লিখিত আবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা রাতের আধাঁরে অংশীদারিত্বে সৃজিত ৭৫ একর সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন জাতের ৮৫ হাজার চারা গাছ ধ্বংস করে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে রোপিত ৮৫ হাজার চারা গাছ। এতে ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। বর্তমানে ৭৫ জন উপকারভোগীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
জানা যায়, ২৫ নভেম্বর শনিবার ভোর রাত ৩টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী বন বিটের আওতাধীন নয়াপাড়ায় বনভুমিতে সৃজিত অংশিদারীত্ব সামাজিক বাগানে এঘটনা ঘটেছিল। কয়েক শত রোহিঙ্গা পরিবার আকষ্মিকভাবে রাতের আঁধারে সৃজিত সামাজিক বাগানে বসতি গড়তে খুঁটি স্থাপন করে। খবর পেয়ে ভোর ৫টার দিকে বন বিভাগ, সিপিজি ও সামাজিক বনায়নের অংশীদারিত্বের সদস্যরা দুই ঘন্টা ব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকজন রোহিঙ্গা মোবাইলের মাধ্যমে এক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে এবং তাদের উসকানীতে ফের হাজার হাজার রোহিঙ্গা দলবদ্ধ হতে থাকে। এক পর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে ওই রোহিঙ্গারা সৃজিত সামাজিক বাগানের জমিতে বাধা তোয়াক্কা না করে বাসা তৈরী করতে মাটি খুঁড়াখুড়ি শুরু করে। জনবল কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে বন বিভাগের লোকসহ সিপিজি ও অংশীদার সদস্যরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। সেই অভিযানে অংশ গ্রহন করেন মোচনী বন বিটের এফজি সালাহ উদ্দিন, পলাশ ভৌমিক, সামাজিক বনায়নের অংশীদার কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক বদিউর রহমান, অর্থ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বন বিভাগ, পাহারা দল (সিপিজি) ও সৃজিত বাগানের অংশীদার কমিটির সদস্যরা।
সৃজিত বাগানে অংশীদারে থাকা সদস্যরা জানান, গত জুন মাসে ৭৫ একর জমিতে ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বিভিন্ন জাতের ৮৫ হাজার চারা রোপন করা হয়েছিল। মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হলে রোহিঙ্গারা এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিলেও এতোদিন পর্যন্ত ওই বাগানে কোন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়নি। অদৃশ্য শক্তির ইশারা ও উসকানিতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গারা রাতের আধাঁরে বাগানে আশ্রয় নিয়েছে। এই অদৃশ্য শক্তি বা উসকানি দেওয়া লোক কারা, তা খতিয়ে দেখা জরুরী। তাদের কারনে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির পাশাপাশি বনভূমি ধ্বংস ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ের যে অংশটুকু গাছ গাছালিতে ভরপুর সে অংশটাও রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাচ্ছে। তাঁরা শিগগিরই এর বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন না করলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে সৃজিত বাগানের অংশীদার কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন ‘রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। ইতিমধ্যে কৃষি ও লবন উৎপাদনের অনেক একর জমি তাদের আশ্রয়ে চলে গেছে। এতে আমরা লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এরপর হঠাৎ করে অদৃশ্য শক্তি বা উসকানিতে রাতের বেলায় এক সাথে প্রায় ২ হাজার পরিবার সৃজিত সামাজিক বাগান দখল করে বসতি স্থাপনের তোড়জোড় শুরু করেছে। তা খতিয়ে দেখা না হলে ভবিষ্যতে মারাত্মক হুমকীর মূখে পড়ার আশংকা রয়েছে। শিগগিরই এসব রোহিঙ্গাদেরকে বনভুমি থেকে উচ্ছেদ করে সৃজিত সামাজিক বাগানটি রক্ষার দাবি করছি’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে বার বার জানানো হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সৃজিত সামাজিক বাগানের উপকার ভোগীরা। টেকনাফ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কান্তি বলেন ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে’।