প্রকাশিত: ১৩/০৮/২০২২ ২:৪০ পিএম


বিগত কয়েক মাস ধরে শুনে আসছি ডলারের দাম খোলাবাজারে সর্বকালের রেকর্ড ব্রেক করছে।আগামীকাল আবার আজকের রেকর্ড ব্রেক করবে।এভাবে চলছে বেশ ক’দিন ধরে।এখানে ডলার বলতে কেবল আমেরিকান মুদ্রা বা মার্কিন ডলারকে বুঝানো হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বিনিময় মাধ্যম হিসাবে মার্কিন ডলারের গ্রহনযোগ্যতা ও প্রচলণ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বিদ্যমান।তাছাড়া মার্কিন ডলার ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা মজুদের একক মাধ্যমের ভূমিকাও পালন করছে।আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় রেট অনুযায়ী বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার সমান বাংলাদেশী ৯৫ টাকা।অর্থ্যাৎ ৯৫ টাকার বিনিময়ে মাত্র ১ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়।ঘটনা হলো আপনি বর্তমানে ৯৫ টাকায় এক ডলার সংগ্রহ করতে পারবেন না যদি না কোন ব্যাংক আপনাকে ডলার সরবরাহ করে।তাহলে উপায় কী? বিকল্প পদ্ধতি কিংবা খোলাবাজারে গেলে আপনি মার্কিন ডলার পর্যাপ্ত পাবেন কিন্তু আপনাকে গুনতে হবে অধীক টাকা।খোলাবাজার থেকে বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার কিনতে হলে প্রায় ১২০ টাকা দিতে হবে।অর্থ্যাৎ আপনাকে প্রতি ডলারের জন্য প্রায় ২৫ টাকা বেশি দিতে হবে। আরো সহজে বুঝার জন্য এভাবেও হিসাব করা যাবে একহাজার ডলার কিনতে আপনাকে পঁচিশ হাজার টাকা বেশি দিতে হবে।একই ভাবে বিক্রেতা খোলাবাজারে একহাজার ডলারের বিনিময়ে পঁচিশ হাজার টাকা বেশি পেলেন।নিম্নে ডলার সংক্রান্ত আমার ২ টি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরছিঃ
অভিজ্ঞতা একঃ ২০১৯ সালের ঘটনা,নেপাল ও ভারত ভ্রমণের প্রাক্কলে দুই হাজার ডলার কিনার জন্য আমাকে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত নামকরা তিনটি বাংলাদেশী ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হয়েছিল।তাও এক শাখা বলে তিন’শ ডলার দিতে পারবে আরেক শাখা বলে দুই’শ ডলারের বেশি দিতে পারবে না!!আরো মজার ব্যাপার হলো কক্সবাজার শহরে অবস্থিত ঐ ব্যাংকগুলো’র কোন শাখাই ডলার সরবরাহ করতে পারেনি।তার কারণ ছিল জেলা শহরে হয়ত ডলারের চাহিদা তখন কম ছিল।অথবা জেলা শহরের সকল শাখাতে ডলার কেনা-বেচা হতো না।কিন্তু বিভাগীয় শহর এবং বন্দর নগরীর প্রতিটা শাখাতে কি ডলার সরবরাহ রাখা যেত না?শেষ পর্যন্ত হাজারী গলি’র মানি এক্সচেঞ্জের এক দোকান থেকে বেশি টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করে প্রয়োজন মিটাতে হলো আমাকে।যেহেতু আমার চাহিদা ছিল কম,সেই বারের মত কিছুটা সহজে সমাধান করা গিয়েছিল।
অভিজ্ঞতা দুইঃ ভারত ভ্রমণের প্রাক্কলে ২০২২ সালের শুরু’র দিকের ঘটনা কক্সবাজার শহরের বেশ ক’টা ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করা হলেও কোন ডলার পাওয়া গেল না।মজার ব্যাপার হলো এক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার গোপনীয় তথ্যে জানতে পারলাম ঐ শাখার দারোয়ান হয়ত খোলা বাজারের রেটে ডলার ম্যানেজ করে দিতে পারবেন।পরে এই তথ্যের কিছুটা সত্যতাও পাওয়া গিয়েছিল।শেষমেষ আবারও পরিচিত এক মানি এক্সচেঞ্জের দোকান থেকে প্রতি ডলার ৯৩ টাকায় সংগ্রহ করতে হলো।তখন ব্যাংক রেট ছিল প্রায় ৮৪ টাকা।বৈধ উপায়ে কিংবা ব্যাংক যখন মানুষের চাহিদামত ডলার সরবরাহ করতে পারেনা মানুষ বাধ্য হয়ে তখন খোলা বাজারে যায়।ব্যাংক প্রয়োজনে রেট কিছুটা বাড়িয়ে হলেও সরবরাহ নিশ্চিত করুক তাহলে আর কেউকে খোলা বাজারে যেতে হবে না।ডলার রেট বাড়ার জন্য নিশ্চিয়ই আরো বহুত কারণ রয়েছে তবে উপরিউক্ত কারনটিও একেবারে ফেলনা নয়।ডলার সংকটের এহেন কান্ড দেখে ব্যাংকের এক সময়ের ক্যালেন্ডার বিতরণের কথা মনে পড়েগেল।প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ব্যাংক তাদের ক্লায়েন্টদের ব্যাংকের নামে ছাপানো ক্যালেন্ডার সামগ্রী বিতরণ করতো।তবে এই ক্যালেন্ডার সবাইকে বিতরণ করা হতো না।গ্রাহকভেদে কেউকে ডেক্স ক্যালেন্ডার,কেউকে টেবিল ক্যালেন্ডার আবার কেউকে ডায়েরি ও কলম ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ করা হতো।সঙ্গত কারণে আমিও পিছনের গ্রুপে অর্থ্যাৎ কিছুই না পাওয়ার দলে ছিলাম।যদিও আমার ব্যাংক হিসাব ছিল কিন্তু ব্যাংকের দৃষ্টিতে হয়ত আমি ঐ দলের যোগ্য ছিলাম না।পরে আমি নিজেই এই সমস্যার সমাধান বের করি।চট্টগ্রাম শহরের নিউ মার্কেটের (বিপনি বিতান) নিচে ও জিপিও’র সামনে গিয়ে ঐ ব্যাংকের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি দেখে দেখে বেছে বেছে(চট্টলার ভাষায়ঃ চাই চাই,বাছি বাছি) কিনতাম।ক্যালেন্ডারের জন্য আর কোন ব্যাংক কর্মকর্তা’র কাছে দ্বারস্থ হতে হতো না।মজার বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা সবসময় ক্যালেন্ডার সংকটের কথা বলতেন কিন্তু তার পাশের মার্কেটে ঐ ব্যাংকেরই ক্যালেন্ডার সামগ্রী পত্রিকার হকারের কাছে সূলভ মূল্যে পাওয়া যেত!
যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্ব একটা বিশেষ অর্থনৈতিক সংকটাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাই খোলাবাজারেও ইদানীং ডলার সংকট তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু আমদানি পণ্যের পুরোটায় ডলারের মাধ্যমে বিনিময় করা হয় সেহেতু ডলারের দাম বৃদ্ধি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেতে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া কিংবা অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
খোলা বাজারের ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতিসত্বর ব্যাংকের সকল শাখায় পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।এতে বাংলাদেশ ব্যাংক সকল তফশীলভুক্ত ব্যাংকে তার মনিটরিং সিস্টেম জোরদার করতে পারে। পাশাপাশি ডলারের অবৈধ মজুদদারদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।এতে করে বাজারে ডলারের বিলাসী চাহিদা কিছুটা হলেও সীমিত হবে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে সব থেকে লাভবান হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকারীরা এবং আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।উভয়ের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন সুবিধা বাড়িয়ে দেশে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।রেমিট্যান্স সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি নেওয়া একটি উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয় মনে হচ্ছে;ডলার সঙ্কট কাটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন সহজে রেমিট্যান্স দেশে আনতে পারে সে জন্য শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট স্থাপন বা প্রবাসী রেমিট্যান্স দেশে আনার চুক্তি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হবে না; শুধু প্রয়োজনীয় তথ্য জানালেই হবে।রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্টানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তিদের জন্য “রেমিট্যান্স এওয়ার্ড” বা সিআইপি সমতুল্য “আরআইপি” চালু করা যেতে পারে।এতে করে প্রবাসীদের মধ্যে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বৃদ্ধি পেতে পারে।বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস,মিশন ও কনসুলেট অফিস এক্ষেত্রে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।এনবিআর’র সিআইপি আইডিয়া এক্ষেত্রে শিখন অভিজ্ঞতা হিসাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিকারীরা সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেলের দাম আবারও বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।তাদের যুক্তি তাদের নাকি খোলাবাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে ফলে তাদের আমদানি ব্যয় অনেকগুণ বেড়ে গেছে। যদিও বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমেছে।যদি আমদানিকারীদের যুক্তি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজীয় ডলার সহায়তা প্রদান করতে পারে।এক্ষেত্রে তাদের আমদানি ব্যয় অতিরিক্ত হবে না ফলে জনদূর্ভোগ কিছুটা হলেও লাগব হবে।তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ন্যায় রাতারাতি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও সমীচীন হবে না।নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতির কারণে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।জনদূর্ভোগ চরমে উঠলে চলমান সকল উন্নয়ন বিফলে যাবার আশংকা রয়েছে।
বি.দ্রঃ এটি একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাধর্মী লেখা)

লেখক,
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি)
শেড।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...