প্রকাশিত: ০৭/০৭/২০২২ ৯:৩৬ এএম

নিষিদ্ধ সত্ত্বেও কক্সবাজারের খরুলিয়ায় এবারও মহাসড়কের উপরেই বসেছে কোরবানির পশুর হাট। আবার কোনো কোনো এলাকায় মহাসড়কের পাশে বসা পশুর হাট দখল করে নিয়েছে মহাসড়ক। এতে করে চলার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। কর্তব্যরত পুলিশের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগাম, ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কের আশেপাশে বসানো হাটের কারণে যান চলাচল ব্যহত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
৬ জুলাই বুধবার বিকালে দেখা গেছে এসব ভয়াবহ চিত্র। মানুষ হেটে হেটে কোরবানীর পশুর হাটে গেছে। দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার ধরে যানজটে আটকে ছিল সমস্ত যানবাহন।

খরুলিয়া বড় বাজারটি বলাচলে দক্ষিণ চট্রগ্রামের অন্যতম হাট। মহাসড়কের লিংকরোড থেকে বাংলাবাজার হয়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ খরুলিয়ায় গিয়ে মিলেছে এই হাট। মহাসড়কের দু-পাশের দুই লেন দখল করে নিয়েছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগ বিক্রেতা মাস্ক পড়েন না। আবার ক্রেতাদের মধ্যেও দেখা গেছে মাস্ক পরায় অনীহা। হাটে গিয়ে দেখা গেছে বেশিরভাগ বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই।

এদিকে, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের সংক্রমণের মধ্যেও পাড়া মহল্লায় হাট বসায় মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। এই এলাকায় আরও ৪/৫দিন আগে থেকেই পাড়া-মহল্লার ভিতরেই হাট বসানো হয়েছে। এতে করে ঘর থেকে বের হলে ঠেলতে হচ্ছে ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, যারা গরু এনেছে তাদের বেশিরভাগই স্বাস্যবিধি মানছে না। এটা ঈদের পর ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, কোরবানির পশুর কারণে রাস্তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে গা ঘেঁষে চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের উপরেই বসেছে কোরবানির হাট। এর মধ্যে ঈদগাঁও, খরুলিয়া ও মরিচ্যাবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হাটের কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
ভুক্তভোগিরা জানান, প্রতি বছরই কোরবানির হাট এলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মহাসড়কের উপর কোনো হাট বসবে না। কিন্তু হাট এলে সে কথা আর কেউ মনে রাখে না। প্রশাসনের খাস কালেকশনের প্রতিনিধি ও

ইজারাদাররা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই সড়ক-মহাসড়কের উপর হাট বসাতে পাইকারদের উৎসাহিত করে থাকেন। এভাবে হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
এদিকে খরুলিয়া গরু বাজার নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। এর কারন হিসেবে দেখা গেছে, বৃহত্তম কোরবানের হাট খরুলিয়া বাজার খাস কালেকশন নামে নিয়ন্ত্রণ করছে পুরনো সিন্ডিকেট। ফলে গেল ২ বছরে সরকার হারিয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব। সর্সে ভুত থাকায় বাজারটি যে কোনভাবে প্রতি বছর চলে যায় একই সিন্ডিকেটের হাতে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে উপযুক্ত ডাককারি না পেয়ে তারা খাস কালেকশনে ছেড়ে দিয়েছে বাজারটি। যারা খাস কালেকশন করছে তারা আবার পূর্বের ইজারাদার। কৌশলে মোটা টাকার বিনিময়ে তারা ইজারা হোক কিংবা খাস কালেকশান হোন তাদের হাতেই চলে যায় খরুলিয়া বাজারটি। ভেতরে কোন সিন্ডিকেট বাজারটি নিয়ন্ত্রন করছে তা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। জড়িত প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন তারা।

জানা যায়, সদরের অন্যান্য বাজারের মত খরুলিয়া বাজারটি ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালিন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় দরপত্র আহবান করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ দিন। শেষ দিনে বাজারটি সর্বোচ্চ ডাক পায় এনএফ এন্টারপ্রাইজ ২ কোটি ৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় হিসাবে হাবিব ব্রাদার্স ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে কেউ বাজারটি শেষ পর্যন্ত নিলামে অংশ গ্রহন না করায় পরবর্তী ৩ বার পুনঃ ইজারা করার নিয়ম থাকলেও বাজারটি চলে যায় খাস কালেকশনে। সম্পূর্ণ কৌশলে বাইরের অদৃশ্য ইশারায় খাস কালেকশনে চলে যাওয়ায় সরকার এর আগেও প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। খাস কালেকশানের নামে লুতরাজের একটি ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। বাজারটি ১৪২৮ সালে সিন্ডিকেটের কারনে খাস কালেকশানে চলে যাওয়ায় মাত্র ১৪ লাখ টাকা সরকার রাজস্ব পায় অথচ এর আগে ১ কোটি ৪১ হাজার টাকা ইজারার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব পায়। ১৪২৭ এবং ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ২ বছরে খাস কালেকশানের নামে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার প্রধান সহকারি উত্তম কুমার দাশ বলেন- গত ২ মাসে খরুলিয়া বাজার থেকে খাস কালেকশানের ১১ লাখ টাকা জমা হয়েছে। তিনি ইজারা হলে কোটি টাকার বেশি ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো বলে তিনি জানান।

এদিকে খরুলিয়া বাজারটি সড়কের উপরে বসার কারনে প্রতিনিয়ত সড়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের উভয় পাশে বাজার বসার কারনে স্কুল, মাদ্রাসাগামি ২ হাজার শিক্ষার্থী চরম উৎকন্ঠায় চলাচল করছে। অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
অপরদিকে যারা বাজারের ইজারাদার পূর্বে যারা ২ থেকে আড়াই কোটি টাকায় বাজার ইজারা নিতো তারা সহজে খাস কালেকশানের দায়িত্ব পাওয়ার কারনে সরকারি কোষাগারে প্রকৃত টাকা রাজস্ব জমা না হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে সরকার খাস কালেকশান হিসাবে কোরবানের পশু বিক্রির টাকা উত্তোলনের রশিদে ইজারাদারদের নাম থাকায় পুরো টাকা সিন্ডকেটের পকেটে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ইজারা টাকার উত্তোলনের রশিদে যে নাম ও মোবাইল নাম্বার রয়েছে তারা হলেন স্থানীয় মেম্বার মো: শরীফ উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা মো: আলম, সাবেক ইজারাদার আবদুল মান্নান ভুট্টো এবং নুরুল আজিমের নাম ও মোবাইল রয়েছে। যদিও খাস কালেকশানের রশিদে সরুকারি তহশিলদার অথবা নিয়োজিত ব্যক্তির নাম থাকার নিয়ম রয়েছে। সম্পূর্ণ নীয়মনীতি তোয়াক্কা না করে সরকারি টাকা মেরে দিতে এ ফন্দি করেছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
গত বছর খরুলিয়া বাজারটি সরকারি ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা হলেও এবছর খাস কালেকশানে এর ১০ ভাগের ১ ভাগ ও সরকারি কোষাগারে জমা হবেনা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু ১৪২৭ বঙ্গাব্দে প্রায় ২ কোটি টাকায় বাজারটি ইজারা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও খাস কালেকশানে জমা পড়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা যা অবশিষ্ট টাকা সিন্ডিকেটের পকেটে চলে গেছে। দূর্নীতির মহাযজ্ঞ খরুলিয়াবাজার ঘিরে তা পরিস্কার হয়েছে কয়েক বছরের সরকারি রাজস্ব জমা দেখে সহজে অনুমেয়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ কৌশলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইজারা বাতিল করে খাস কালেকশানের নামে সরকারি রাজস্ব বঞ্চিত বিষয়ে জানান-খরুলিয়া বাজারটি সরকারের রাজস্ব আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এর মাধ্যমে সরকার প্রতিবছর উল্লেখ্যযোগ্য অর্থ পেয়ে থাকে। বাজারটি ইজারা না হওয়ার পেছনে কোন সিন্ডিকেট কাজ করেছে তা আমরা তদন্ত করে করে ব্যবস্থা নেব। ইজারাতে উপযুক্ত দরদাতা থাকা সত্তেও কেন ইজারা হয়নি সেটি মূলত আমরা দেখব। সিন্ডিকেট যদি জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা রাজস্ব দিয়েই সরকার দেশের জন্য, জনগনের জন্য কাজ করছে।

উল্লেখ্য খরুলিয়া বাজারটি সিন্ডিকেট ও খাস কালেকশানের হাত থেকে মুক্ত করতে না পারলে কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। নোট-দৈনিক কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...