উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কর্ণফুলী নদীর নিচে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। এটি চালুর তিন বছর পর ওই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। চলাচলকারী গাড়িগুলোর বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫১ শতাংশ বাণিজ্যিক কাজ বা পণ্য পরিবহন করবে। টানেল নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে এ পূর্বাভাস জানা গেছে।
চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানি (সিসিসিসি) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পাটনার্স হংকং লিমিটেড যৌথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। এর ওপর ভিত্তি করে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে সিসিসিসি টানেলের নির্মাণকাজ শুরু করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ইফতেখার কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টে তিনটি স্থানকে চিহ্নিত করা হলেও অর্থনৈতিকভাবে বেশি উপযোগী হিসেবে নেভাল একাডেমি পয়েন্ট বেছে নিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। কারণ শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখেই টানেল নির্মিত হচ্ছে। ’
তিনি জানান, ইতিমধ্যে নেভাল পয়েন্টে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে সেখানে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বা বেজ ক্যাম্প নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। মোট ৪২ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে যন্ত্রপাতি রাখা, নির্মাণসামগ্রী বানানো এবং শ্রমিক রাখার এই বিশাল শেড। এখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে পুরো কর্মযজ্ঞ।
একই সঙ্গে আগামী ৩১ মের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর ওপারের সব ভূমি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেতু বিভাগ থেকে। ফলে মূল কমর্যজ্ঞ শুরু হতে আর বেশি সময় নেই বলেও তাঁর আশা।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে কর্ণফুলী টানেল চালু হলে সেই বছর ৬৩ লাখ একক গাড়ি টানেলের নিচ দিয়ে চলাচল করবে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। আর ২০৩০ সালে তা হবে একেবারে দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রায় ১৪ লাখ। চালুর প্রথম বছরে চলাচলকারী গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহনকারী ট্রেইলর ও বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস ও মিনিবাস আর মাইক্রোবাস। বাকি ১২ লাখ কার, জিপ ও বিভিন্ন ছোটগাড়ি। সমীক্ষায় বলা হয়, কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। বর্তমানে এই রুটে চলাচলকারী গাড়িগুলো কর্ণফুলী সেতু ও কালুরঘাট সেতু হয়ে চলাচল করে। এতে প্রতি গাড়িকে গড়ে ২০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। টানেল দিয়ে পার হলে বাড়তি সময় আর লাগবে না।
সমীক্ষায় বলা আছে, গভীর সমুদ্রবন্দর, মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বেশির ভাগই টানেলকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠবে।
জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট এস এম আবু তৈয়ব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানেলের গুরুত্ব এখনো অনেকে অনুধাবন করতে পারেননি। শুধু পর্যটন বা যাত্রী পারাপারের জন্য এতবড় প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সীতাকুণ্ড থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় বিশাল এলাকাকে শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলস্রোতে নিয়ে আসাই প্রধান লক্ষ্য। জাইকাসহ সবার প্রতিবেদনেই এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ’
জানা গেছে, ঢাকা থেকে একটি পণ্যবাহী গাড়ি সরাসরি কক্সবাজার যেতে সময় ও দূরত্ব দুটোই কমবে। যানজট ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে যেতে পারবে গন্তব্যে। মহেশখালী থেকে একটি গাড়ি টানেল দিয়ে সরাসরি ঢাকায় পৌঁছতে পারবে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ না করেই। কর্ণফুলীর ওপার থেকে একজন ব্যবসায়ী ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। মিরসরাইয়ের একজন ব্যবসায়ীও এই সুফল পাবেন না।
নকশা অনুযায়ী কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ হাজার ৫ মিটার বা ৩ কিলোমিটারের চেয়ে সামান্য বেশি। চট্টগ্রাম নগরীর নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে তলদেশে ঢুকে তা বের হবে ওপারে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানি (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ৩৯ ফুট (১২ মিটার) থেকে ১১৮ ফুট (৩৬ মিটার)। মোট দুটি টিউব নির্মিত হবে। এর একটি দিয়ে গাড়ি শহরপ্রান্ত থেকে প্রবেশ করবে, আরেক টিউব দিয়ে ওপার থেকে শহরের দিকে আসবে। টানেলের প্রতিটি টিউব চওড়ায় হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতায় হবে ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট।
একটি টিউবে বসানো হবে দুটি স্কেল। এর উপর দিয়ে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করবে। পাশে হবে আরও একটি টিউব। মাঝে ফাঁকা থাকবে ১১ মিটার। যেকোনো বড় যানবাহন দ্রুত ও খুব স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে এই টানেল দিয়ে।