ডেস্ক রিপোর্ট::
কক্সবাজারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কিন্তু সেই তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। শয্যা সংকটের কারণে, চারভাগের তিনভাগ আক্রান্তই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায়। হাসপাতালগুলোতে রয়েছে অক্সিজেন সংকট। একটি আইসিইউ শয্যা নেই জেলায়। তবে এই সংকট উত্তরণে নানামুখী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের প্রথম রেডজোন ঘোষণা করা হয় কক্সবাজারকে। যেখানে এ পর্যন্ত আক্রান্ত পনের’শোর বেশি। যার কারণে এখন লকডাউন ৩টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়ন। তবে আক্রান্ত দ্রæত বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসা সুবিধা।
কক্সবাজার শহরে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এক করোনা রোগী বলেন, কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ার পর আইসোলেশন সেন্টারে যাবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আইসোলেশনে বেড সংখ্যা এতই কম যার কারণে আইসোলেশনে বেড না পেয়ে বাসায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বর্তমানে আমার পরিবারে ৪ জন করোনা পজেটিভ রয়েছে যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
রামু আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসারত এক করোনা রোগী বলেন, আইসোলেশন সেন্টারটি খুবই অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন। যেখানে প্রতিদিন কয়েকবার পরিস্কার করার দরকার সেখানে দিনে একবারও পরিস্কার করা হয় না। এছাড়াও অক্সিজেন ব্যবস্থাও এত ভাল না; হাইফ্লো অক্সিজেন সংকটও রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য শয্যা আছে ১০টির মতো। এরবাইরে রামু, চকরিয়া এবং উখিয়ায় আইসোলেশন সেন্টারে শয্যা সংখ্যা তিন’শ। শয্যার অভাবে চারভাগের তিনভাগ আক্রান্তকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বাসায়। এরবাইরে হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা। নেই আইসিইউ সুবিধা। ফলে বাড়ছে প্রাণহানি।
রামু উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নোবেল বড়–য়া বলেন, করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন ও আইসিইউ সুবিধা দরকার। কারণ দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে কিছু রোগীর হাইফ্লো অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ছে। এছাড়া আইসিইউ সুবিধা না থাকায় রোগীদের চট্টগ্রামে প্রেরণ করতে হচ্ছে।
জেলা সদর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহীন আব্দুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে গত কয়েকদিনের মধ্যে চক্রবৃদ্ধি হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। যদি আমাদের সুযোগ থাকতো অনেক বেশি পরীক্ষা করতে পারতাম তাহলে দেখা যেত রোগী সংখ্যা অনেক অনেক বেড়ে যেত।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে এখনো পর্যন্ত জরুরী পর্যায়ে রোগীদের সেবা দেয়ার মত ব্যবস্থা নেই। হাইফ্লো অক্সিজেন, সাপ্লাই সিস্টেম, আইসিইউ, এইচডিইউ, ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ অন্যসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন ছিল সেগুলো এখনো পর্যন্ত নেই।
সংকটের কথা স্বীকার করছে স্বাস্থ্যবিভাগও। বলছে, অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো গেলে অনেকটাই কমতো রোগীদের ঝুঁকি। আর এই সংকট উত্তরণে নানামুখী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবর রহমান বলেন, করোনা রোগীর তো চিকিৎসা হচ্ছে। তবে যাদের সংক্রমণের মাত্রাটা বেশি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যেটা সেটা হল অক্সিজেন। অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো গেলে অনেকটাই কমতো রোগীদের ঝুঁকি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে নানামুখী সংকটের মধ্যে যে সামর্থ্য রয়েছে তা দিয়ে কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্য সেবার মানটা কিভাবে বাড়ানো যায় তার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এখন আইসোলেশন সেন্টার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে হোটেল সী প্রিন্সেসকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও যদি প্রয়োজন পড়ে তার জন্য আরও বড় একটি হোটেল আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত এভাবে আইসোলেশন সেন্টার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়াও টেস্ট বাড়ানোর জন্য পিসিআর ল্যাব বাড়ানোর হচ্ছে। চেষ্টা অব্যাহত আছে; রেড, গ্রীন, ইয়েলো জোনে ভাগ করে কক্সবাজারকে করোনামুক্ত করার।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, কক্সবাজারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫’শ ১৬ ও মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে চার নম্বরে রয়েছে কক্সবাজার।