প্রকাশিত: ১৭/০৪/২০২০ ৯:৫১ পিএম

করোনা প্যানডেমিক এর মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি আমরা এখন। আমেরিকা, ইটালি, স্পেনের মতো সার্প পিক শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এর কারণে।

৮ মার্চ প্রথম করোনা সনাক্ত হবার পর থেকে বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ঢাকা, নারায়নগঞ্জের মতো হটস্পট ঘিরে করোনা বিস্তার লাভ করছে দ্রুত গতিতে। লকডাউন অমান্য করে লোকজন ঐ সমস্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে, যেটা নিঃসন্দেহে আশংকাজনক। যার ফলে বাংলাদেশের প্রায় সবকটা জেলা আক্রান্ত হয়েছে। সারাদেশকেই তাই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এর কারণে সম্প্রতি করোনা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। এটাও একটা হটস্পট। সাতকানিয়া ও নাইক্ষংছড়িতেও করোনা রোগী পাওয়া গেছে। করোনা সত্যিকার অর্থেই আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে! তাই সময় থাকতে, পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবার আগেই সাবধান হোন।

কক্সবাজারে ২৫ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হন। এর পর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে করোনা সনাক্তকরণের জন্য পিসিআর ল্যাব এর কার্যক্রম শুরু হয়। এটা নিঃসন্দেহে এই এলাকার জন্যে একটা আশীর্বাদ। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এই করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগীর চিকিৎসা, আইসোলেশান ও স্যাম্পল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে।

এই সাহসী ভূমিকা পালনের জন্যে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আইসোলেশান ওয়ার্ড, বহিঃবিভাগ, ফ্লু কর্ণার সহ হাসপাতালের প্রত্যেকটা বিভাগের ডাক্তার নার্স সহ যেসব স্বাস্থ্য কর্মী জীবন বাজি রেখে সাহসিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এবং জরুরি সেবাসহ অন্যান্য সেবা অব্যাহত রেখেছেন তারা নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল থেকে একঝাঁক অসমসাহসী ল্যাব টেকনোলজিস্ট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতাল ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করে আনছেন। ল্যাবে কর্মরত চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট গণ দিনের পর দিন নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।যার ফলে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত করোনা পরীক্ষা হচ্ছে কক্সবাজারে।

পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা দিনরাত লকডাউন, হোম স্টে, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশান বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা, সাংবাদিক ভাইয়েরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা যখন যেভাবে সহযোগিতা চেয়েছি সেভাবে তৎক্ষণাৎ আমাদের সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন। এর জন্যে তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। গুটিকয়েক নির্বোধ উস্কানিদাতা ব্যাতিত সমস্ত কক্সবাজারবাসি আমাদের সবাইকে আজ উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন। তাদের সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

এই মূহুর্তে আমাদের করণীয় কি?

🌷প্রথম কাজ হচ্ছে- লকডাউন অবস্থা মেইনটেইন করতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করা। বাসায় অবস্থান করা, কোন অবস্থাতেই অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া।

🌷বাড়িতে অবস্থান কালীন সময়ে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে নিয়মিত হাত পরিস্কার করা, ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণু মুক্ত করা, হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যখন যেসব নির্দেশনা দেয়া হয় সেসব মেনে চলা।

🌷নিকটতম প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া। তাদের খাবার সহ জরুরি প্রয়োজনে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা। কেউ যেন অনাহারে কষ্ট না পায়, সেটা নিশ্চিত করা। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, ভোগবিলাস বাদ দেয়া উচিত।

🌷বাড়িতে অবস্থান করে নামাজ সহ অন্যান্য প্রার্থনার মাধ্যমে স্রষ্টাকে স্মরণ করা। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আবেগপ্রবণ হয়ে মসজিদ বা অন্যান্য উপাসনালয়ে জমায়েত হওয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের সবার দায়িত্ব।

🌷আপনার ঘরে করোনার লক্ষণযুক্ত কোন রোগী থাকলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতাল যেমন জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করুন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব প্রতিদিন ৯৬ টি টেস্ট করতে সক্ষম। তাই সন্দেহজনক সবাইকে পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

🌷হোম কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশান এর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা এবং চিকিৎসক এর কাছে কোন অবস্থাতেই কোন হিস্ট্রি গোপন না করা।

🌷এই সময়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল রোগীর লোড, জনবল এবং ধারণক্ষমতার বিচারে আইসোলেশান এর জন্যে যথেষ্ট নয়। তাই কক্সবাজারের অন্যান্য আইসোলেশান ফেসিলিটিগুলো সত্যিকার অর্থে চালু করা সহ হোম আইসোলেশান এর দিকে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেসরকারি হাসপাতালগুলিও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত।

🌷আবেগপ্রবণ হয়ে অন্যান্য এলাকা থেকে আত্মীয় স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবদের কক্সবাজারে আসতে উৎসাহিত না করা। পুলিশ প্রশাসনের কড়াকড়ি সত্বেও ইতিমধ্যেই অসংখ্য লোক কক্সবাজারে বিভিন্ন উপায়ে প্রবেশ করেছেন যেটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আপনার এলাকায় এই ধরনের কেউ থাকলে তার কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করুন, প্রয়োজনে পরীক্ষা করান।

🌷এই কঠিন সময়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে এবং গুজব ছড়িয়ে যারা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে, যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছেন তাদের সবাইকে প্রতিহত করুন এবং সামাজিকভাবে বয়কট করুন, তাদের সহযোগী বা সমর্থনকারী সেইসব মীরজাফর ও রায়দূর্লভদেরও চিহ্নিত করে রাখা জরুরি।

আমরা সবাই আমাদের জীবন বাজি রেখে করোনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। আমাদের ও জীবন আছে, ঘর সংসার, মা বাবা, স্ত্রী সন্তান আছে। তার পরেও অনেক সীমাবদ্ধতা ও নিরাপত্তা ঘাটতি সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাই এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ইগনোর করুন। আমাদেরকে এই সহযোগিতাটুকু করুন।

সামনের একটি মাস খুবই ক্রিটিকাল। তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক, সমাজকর্মী সহ সাধারণ জনগণের সবাইকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই কাজটাই করি।

মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

 

লেখক :
ডা: শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও বিভাগীয় প্রধান জরুরী বিভাগ, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...