জাতিসংঘের কথিত মানবিক করিডোর এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের মতে, এই করিডোর বাস্তবায়িত হলে তা শুধু মানবিক সহায়তার সীমায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। এই উদ্বেগের পটভূমিতে গত ১ মে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড একটি ট্রলার আটক করে, যাতে পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা ছিল ৬০০ বস্তা ইউরিয়া সার। আটক করা হয় ১০ জন পাচারকারীকে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এসব সার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাচার করা হচ্ছিল। এ ঘটনাকে মানবিক করিডোর চালুর আগেই এর সম্ভাব্য অপব্যবহারের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির উখিয়া উপজেলার আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা এবং সকল রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। একই সুরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনের মহাসচিব এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এই মানবিক করিডোর আসলে কার স্বার্থে তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ নতুন নয়। কিন্তু মানবিক করিডোর নামে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো যদি সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করা হয়, তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারি কোনো দপ্তর এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সূত্র মতে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। সচেতন মহল বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে মানবিক করিডোর বা বিদেশি নিয়ন্ত্রণাধীন ডিজিটাল সংযোগ প্রস্তাব একটি বড় ধরণের কূটনৈতিক ফাঁদ হতে পারে। তাই সরকার ও সকল রাজনৈতিক পক্ষকে একসঙ্গে এ বিষয়ে কার্যকর কৌশল নিতে হবে। মিয়ানমারের প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। যেটা বাংলাদেশের বড় একটা সংকট। এমন পরিস্থিতিও হতে পারে রাখাইনে রয়ে যাওয়া বাকি ৬ লাখ রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করবে। রাখাইন নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আরাকান আর্মির সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়া। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে একাধিক জেলেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া। মাস খানেক আগে রমজান মাসে জাতিসংঘে মহাসচিবের সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ঘোষণা করলেন আগামীর ঈদ যেন রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশে গিয়ে করতে পারে। এরপর ঘোষণা করলেন ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত যাবেন।রোহিঙ্গা নেতা জুবায়ের বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন জান্তা সরকার। রাখাইন নিয়ন্ত্রণে আছে আরাকান আর্মির হাতে। জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নাই। যেখানে রাখাইন নিয়ন্ত্রণ জান্তা সরকারের হাতে নেই সেখানে কিভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে তা তাদের বোধগম্য নয়। তাই তিনি বলেন, আগে রাখাইনে আমাদের বাপ-দাদার ভিটে-মাটি আমাদের জায়গা-জমি ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে । অন্যতাই তারা কার কাছে ফিরে যাবে? যারা তাদের নির্যাতন করে দেশ-ছাড়া করেছে সেই জান্তা সরকারের কাছে নাকি আরাকান আর্মির কাছে। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার অগ্রগতি হলো না। বরং আরো নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘ বলছে নতুন করে যে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। রাখাইনে আটকে পড়া ২০ লাখ মানুষ আছে তাদেরকে ত্রাণ এবং মানবিক সাহায্য পাঠানোর জন্যে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে করিডোর দেওওয়ার কথা বলেছেন তারা। বাংলাদেশ সরকার এই করিডোর ব্যবহারের জন্য নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। করিডোর হলো এক দেশের ভূমি ব্যবহার করে অন্য দেশে প্রবেশ করা। রাখাইনে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে খাদ্য এবং সহায়তা পাঠানো দরকার। সেই জন্য করিডোর সুবিধা। করিডোর কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই করিডোর দিয়ে সন্ত্রাসী এবং মাদক ঢুকবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? জাতিসংঘ কৌশলগত ভূমিকা পালন করছে কিনা বা আমেরিয়ার স্বার্থ এখানে আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে স্থানীয়রা চিন্তিত।