# নতুন প্রকল্প চালুর চেষ্টা চলছে ॥ সিভিল সার্জন
# বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ছয়টি সংস্থার পরিচালিত প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হওয়ায় থাকছে না ১৯৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী
# রোগীর চাপ তীব্র হবে ॥ আরএমও আশিক
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী থাকে হাজারের অধিক । এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩ হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ গতকাল শেষ হওয়ায় আজ থেকে হাসপাতালে আসবেনা ১৯৯ জন প্রকল্পভুক্ত জনবল। ফলে চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
এমনিতে রোগীর অতিরিক্ত চাপ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। তার উপর বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ থেকে চাপ আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। উপরোক্ত কথাগুলো আফসোসের স্বরে বলছিলেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো: আশিকুর রহমান।
তিনি দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন - গত ২২ জুন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসেছিলেন আমাদের সচিব (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আমাদের বলছিলেন এ সমস্যার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা এবং নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জানিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। আমরা অনেক চিঠি চালাচালি করেছি এরপরও কোন সুসংবাদ আসেনি। ফলে আজ থেকে আইসিইউ, সিসিউ সহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হবে।
তিনি বলেন, প্রকল্প বন্ধ এবং নতুন করে চালুর বিষয়ে আজকেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের জুম মিটিং হয়েছে। প্রকল্পটি চালু রাখার জন্য দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আজ থেকে প্রকল্পটি বন্ধ হলেও হয়তো ভিন্ন নামে অন্য কোন দাতা সংস্থার মাধ্যমে জেলাবাসী চিকিৎসা সেবা পেতে পারে। উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার আসিফ আহমেদ হাওলাদার।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি চালুর জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তবে এটি ভিন্ন কোন সংস্থার মাধ্যমে ভিন্ন নামে প্রকল্প চালু হতে পারে। চালুর প্রচেষ্টা বিষয়ে আমাদের সচিব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২ দিন কক্সবাজার অবস্থান করে বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। হয়তো অতি শীঘ্রই আমরা জনবল কিছু পাবো।
কক্সবাজারের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবার সরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালটি জেলার ২৮ লাখ মানুষের পাশাপাশি দেশে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ২৫ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যাণে ব্যয় করার আদেশ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালটি আধুনিকায়ন ও চিকিৎসা সেবার উন্নত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির কল্যাণে ব্যয়ের বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নানা প্রকল্প শুরু করা হয়। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থার অধীনে প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালের সেবা পরিধি বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ছয়টি সংস্থার পরিচালিত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। ফলে ৩০ জুনের পর আর থাকছে না ১৯৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, 'হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু করে জনগণের প্রশংসা নিয়ে চালু রেখে আবার অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া অবশ্যই মানবাধিকার পরিপন্থী। নৈতিকতা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। অবিলম্বে আবার চালু করার দাবী করছি।'
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, 'মেয়াদ ভিত্তিক প্রকল্প, মেয়াদ শেষে বন্ধ তো হবে। আবার হয়তো কিছু দিন পর শুরু হবে। বিদেশি অনুদান নির্ভরশীলতা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে হবে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। যেখানে বিশ্বব্যাংকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।'
আইনজীবী জিয়া জানান, 'কিছু দিন আগে আমি আমার একজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে সদর হাসপাতালে গেলে আমি বিষয়টি জানতে পারি। আমরা কক্সবাজারের জনগন বড়ই অভাগা। আমরা দিন দিন নেতৃত্ব শুন্যতায় ভুগছি। অবিলম্বে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।'
আইনজীবী মঈন উদ্দিন জানান, 'বিদেশি অর্থায়নে এনজিও-র মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু চালু রাখার জন্য দেশীয় অর্থায়ন প্রয়োজন ছিল। পরের ধনে পোদ্দারি করতে অভ্যস্ত আমরা। তাই বিষয়টি মাথায় আসেনি। দেশপ্রেমিক মানবতাবাদী ধনকুবের এদেশে কি নেই। আশা করি উনারা এগিয়ে আসবেন, সম্পৃক্ত হবেন স্বাস্থ্য সেবায়।'
কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন এটি স্থানীয়দের প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থার বৈষম্য। কাল থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সদর হাসপাতালের আইসিইউ-সিসিইউ সহ জেলার অনেক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম এতে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ধ্বস নামবে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আবু তাহের বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের বৈষম্য নীতি, রোহিঙ্গাদের জন্য আছে, স্থানীয়দের জন্য বরাদ্দ নেই। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউ-সিসিইউ সহ অনেক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
এদিকে সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মং টিং ক্রো বলেন- ১ মাস আগে প্রকল্প শেষ হওয়ার বিষয়টি আমরা চাকুরিরতদের অবহিত করেছি। বিষয়টি ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের আলাপ আলোচনা চলছে। তবে নতুনভাবে কোন প্রকল্পের মাধ্যমে পুনরায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। জেলার ২৮ লাখ জনগোষ্ঠী ও ১২ লাখ রোহিঙ্গার স্বাস্থ্য সেবার কথা বিবেচনা করে পুনরায় প্রকল্পসমূহ চালুর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।