কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী গাড়ি প্রবেশ করলেই ইজারার নামে আদায় করা হচ্ছে এক ধরনের চাঁদা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিমানবন্দরের নির্ধারিত পার্কিংয়ের জন্য ইজারা থাকলেও বাস্তবে এই বিধানকে অপব্যবহার করছে একদল চক্র। পার্কিংয়ে না গেলেও বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে যাত্রীবাহী গাড়িগুলোকে থামিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রী, চালক ও পরিবহন মালিকেরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেন।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিমান বন্দরের অধিকাংশ পার্কিং স্পেস দখল করে রয়েছে ব্যাটারি চালিত অবৈধ টমটম। অথচ এসব টমটমের লাইসেন্স একক পার্কিংয়ের জন্য কোনো অনুমোদন নেই। পার্কিং সুবিধা প্রাইভেট কার, নোহা ও মাইক্রোবাস,সিএনজি এসবের জন্য থাকলেও বাস্তবে এসব গাড়ির উপস্থিতি খুবই কম।পরিদর্শনকালে আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, একটি প্রাইভেট মাইক্রোযান যাত্রী নিয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় ইজারাদারের কর্মীরা সিগন্যাল দিয়ে গাড়িটি থামায়। শুরুতে তাদের সঙ্গে ড্রাইভারের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে ড্রাইভার পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে দেখা যায়।
ঘটনা শেষে ওই ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি কোনো পার্কিংয়ে ছিলেন না। এসে মাত্রই যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইজারা তোলার দায়িত্বে থাকা লোকজন পার্কিং ফি-এর নামে টাকা দাবি করেন। ড্রাইভার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে তর্কে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত ঝামেলা এড়াতে তিনি ৩০ টাকা দিয়ে দেন।
তাকে প্রশ্ন করা হয়-তিনি আদৌ পার্কিংয়ে ছিলেন কি না এবং যাত্রী তুলতে কতক্ষণ সময় লেগেছে? জবাবে ড্রাইভার বলেন, তিনি পৌঁছানোর আগেই যাত্রীরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি শুধু গিয়ে দরজা খুলে যাত্রীদের তুলেছেন এবং গাড়ি চালু করার মুহূর্তে টাকা দাবি করা হয়।
পার্কিংয়ে থাকা এক টমটম চালককে জিজ্ঞেস করা হয় কত টাকার বিনিময়ে গাড়ির পার্কিং দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে সে বলে, কাগজে ১৫ টাকা বাস্তবে ক্যাশ নিলেন ২০ টাকা। টমটমের তুলনায় অন্যান্য গাড়ি কম কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অন্যান্য গাড়ি এসে চলে যায়। পার্কিং এ কম দেখা যায়। টমটম তো লোকাল তাই একটু বেশি।
এক সিএনজি চালক (যার গাড়ি নং-২৩৫৩) তিনি জানান, বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেই কথিত ইজারার নামে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। টাকা না দিলে গাড়িকে আটকে রাখা, যাত্রী নিয়ে অপদস্থ করা কিংবা অপ্রয়োজনীয় জটিলতার মুখে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটায় তারা। তাই বাধ্য হয়ে যামিলামুক্ত থাকতে ২০-৩০ টাকা দিয়ে দি।
নোহা গাড়ির ড্রাইভার শাহাজাহান বলেছেন, অধিকাংশ প্রাইভেট গাড়ি যাত্রী নামিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। কারণ, যাত্রী নামাতে বা দুই মিনিট থামতে গেলেও ইজারা তোলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা গাড়ি থামিয়ে জোর করে টাকা দাবি করেন। তারা ‘পার্কিং ইজারা’ দেখিয়ে গাড়িচালকদের চাঁদা দিতে বাধ্য করেন-যদিও গাড়িটি কখনো পার্কিং এলাকায় না গিয়েই শুধু যাত্রী নামিয়ে চলে আসে।
প্রাইভেট গাড়ির একাধিক ড্রাইভার অভিযোগ করে বলেন, বিমানবন্দর এলাকায় বৈধ ইজারা থাকলেও তার সীমা কেবল পার্কিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু যারা ইজারা তুলছেন, তারা অপব্যবহার করে যাত্রীবাহী গাড়িগুলোকেই টার্গেট করছেন। এতে সাধারণ চালক ও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন।
এসব ইজারার টাকা নেওয়ার সুপার ভাইজার করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নতুন একটা ছেলে দিয়েছি হয়ত সে বুঝে নাই বিষয়টি। আমি তাকে সতর্ক করে দিব। এভাবে আর কাউকে হয়রানি করবে না। টাকাও তুলবে না অবৈধভাবে। আপনি এটা নিয়া কিছু করবেন না। আপনার জন্য একটা অনারিয়াম ব্যবস্থা করব।
বিমানবন্দর ইজারাদার মিন্টুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়ি ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়ালে যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে ইজারার টাকা নিতেই হবে। কারণ এখনো কর্তৃপক্ষ আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পার্কিং এলাকা বুঝিয়ে দেয়নি।
তাকে প্রশ্ন করা হয়— পার্কিং না দিলে যাত্রী নিয়ে গাড়ি ঢুকল, যাত্রী ও মালামাল নামাতে সময় লাগল, এর মধ্যেই যদি ৫ মিনিট পেরিয়ে যায়, তাহলে কি টাকা দিতে হবে? জবাবে মিন্টু বলেন, যাত্রী ও মালামাল নামাতে ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না।
স্থানীয় পরিবহন মালিক ও চালকরা বিষয়টিকে চাঁদাবাজি উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর ম্যানেজার গোলাম মর্তুজা হাসান বলেছেন, এ বিষয়ে আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। আসল বিষয় হলো, এখানে নির্মাণাধীন কাজ চলছে, তাই এসব বিষয়ে একটু এভাবে অগোছালো হচ্ছে। তবে, খুব দ্রুত যাত্রীদের সুরক্ষা ও শৃঙ্খলায় এসব সমস্যা সমাধান করা হবে