প্রকাশিত: ০৮/১২/২০২১ ৭:৩২ এএম


বর্তমান সরকারের মেয়াদেই শেষ হচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন। দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি-জামায়াত জোট যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করেনি, তা সুপরিকল্পিত। অবশেষে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করছে বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় দেড় বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ স্থাপন, যা এখন আর স্বপ্ন নয়। বরং ক্রমেই দৃশ্যমান।

পর্যটন শহর কক্সবাজারকে সংযুক্ত করতে রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে শুরুতে নির্মাণ কাজে অগ্রগতিতে বাধা ছিল বৃষ্টি ও করোনার বড় ধাক্কা। এতে করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাড়াতে হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে রেললাইন স্থাপন হওয়ামাত্রই কক্সবাজার ট্রেন যাবে, এমন নয়। কারণ নির্মাণ কাজ শেষে ট্রায়াল রান করা হবে কয়েক মাস। এর মাধ্যমে কোন ত্রুটি থাকলে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এগুলো সংশোধনের পরই পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কে সারাদেশ যুক্ত হবে। নতুন যুগের সূচনা হবে রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এক সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে যাত্রা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ।

কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যাবে বিষয়টি স্বপ্নের মতো হলেও আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এটি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর মতো ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের ঝুঁড়িতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন একটি বৈপ্লবিক সংযোজন।

উন্নত রাষ্ট্রে পর্যটন বিকাশে রেল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে এর আগের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেলপথের কোন উন্নয়ন করেনি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যেতে পারে এ বিষয়ে কোন ধরনের চিন্তাই ছিল না তৎকালীন সরকারের। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন মাইলফলক এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও বৈশি^ক মহামারীর জটিলতায় পূর্বের নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ না হলেও আগামী ২০২৩ সালে যে বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমী মানুষ কক্সবাজার ট্রেনে চড়ে যেতে পারবে, তা নিশ্চিত।

প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের কাজ দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ, যার অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত। এটির ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। রেলমন্ত্রী পরিদর্শনে এসেও কয়েক মাস আগে জানিয়েছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে পর্যটন শহর কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ শেষ করা হবে। তাই দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ অব্যাহত আছে।বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এখন চলছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের অবকাঠামোগত সংশ্লিষ্ট কাজ। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করা হবে কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠার, যা এখনও শুরু হয়নি এডিবির ফান্ড ও বিভিন্ন সমস্যায়। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। দুই পর্যায়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি বেশ ভালই।

এ মেগা প্রকল্পের দফতর সূত্র জানিয়েছে, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা কক্সবাজারকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে সময় ব্যয় হচ্ছে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শেষে কাজ শেষ করা যাবে। এরপরও সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে সবকিছু নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে।

এ প্রসঙ্গে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোঃ মফিজুর রহমান জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। বাকি ৩৫ শতাংশ কাজ আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। সেজন্য আমরা চলতি বছরের জুন মাসে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছি, সেটি অনুমোদিত হয়ে আসেনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি কিন্তু ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছি। যেহেতু মহামারী করোনা আবার বাড়ছে। এসব ছাড়াও আরও কিছু অনিশ্চিয়তা আছে। সেগুলো মোকাবেলা করেই কাজ চলছে।

পাঠকের মতামত