ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৪/১২/২০২২ ৭:৪৪ এএম

টানা তিন দিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ভ্রমণ করছেন পাহাড়-সমুদ্রঘেরা মেরিনড্রাইভ সড়ক ও সৈকতের ১১টি পয়েন্টে। আর আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।

কিন্তু হোটেল-মোটেল খালি না থাকায় সৈকত ও সড়কে ঘুরছেন অনেকে। রেস্তোরাঁ, যানবাহনসহ সব জায়গায় বাড়তি অর্থ আদায় ছাড়াও নানা হয়রানির অভিযোগ করছেন পর্যটকরা।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে টানা তিন দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখ পর্যটক। শহরের ৪ শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো রুম খালি নেই বলে জানিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দেখা যায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা থেকে আগত দেড় শতাধিক পর্যটক। সকাল থেকে হোটেল-মোটেলে চেষ্টা করেও রুম পাননি তারা। এখন ভরসা শুধুই ফুটপাত। এরকম বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক সড়কের পাশে অবস্থান করছেন।

খুলনা থেকে আগত পর্যটক সাদেকুল ইসলাম জিকু বলেন, সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে নেমেছি। এরপর কলাতলী নামক একটি রেস্তোরাঁতে সকালের নাস্তা করতে যায়। গিয়ে দেখি সেখানে পা রাখার জায়গা নেই। পরে পাশে রাঁধুনী নামক একটি রেস্তোরাঁয় ১ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করে নাস্তা করি। সেই সকাল থেকে রুম খুঁজতেছি এখনো পাইনি। যে হোটেলেই যাই সবার একটি কথা, রুম খালি নেই।

ঢাকা থেকে ১০ বন্ধু মিলে কক্সবাজার ট্যুরে এসেছেন সাকিব। তিনি বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে এলাম। এসে দেখি রুম খালি নেই। সকাল থেকে রুম খুঁজতেছি, এখনো পাইনি। তবে একটি কটেজে রুম পেয়েছিলাম তবে এতো উন্নতমানের না, আট হাজার টাকা দাবি করে। এছাড়া রুমটাও ছোট, সর্বোচ্চ ৫ জন থাকতে পারবে। তাই নিইনি। এখন সিন্ধান্ত নিলাম সাগরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক গোসল করব এবং হিমছড়িতে একটু ঘুরে রাতের বাস ধরে ঢাকা ফিরে যাব।

কলাতলী এলাকার তারকা মানের হোটেল সী উত্তরার রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা হাসিবুল বলেন, আমাদের হোটেলে ৬২টি রুম আছে, কিন্তু একটিও খালি নেই। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত সব বুকিং আছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য এলেও তাদের রুম দিতে পারছি না। আবার অনেকে কল দিয়েও রুম চাচ্ছেন।

হোটেল দি প্রেসিডেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, আমার হোটেলে ৫০টি রুম আছে। সবগুলো এক সপ্তাহ আগেই বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য আসছেন। অনেককেই ফেরত দিতে হয়েছে। কিছু পর্যটক পূর্বের পরিচিত হওয়ায় হোটেলে রুম দিতে না পেরে আমার হোটেলের পাশে থাকা একটি ঘরে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখনো বাসে করে পর্যটক আসতেছেন।

তারকা মানের রেস্তোরাঁ শালিকের মালিক নাছির উদ্দীন বলেন, সকাল থেকে পর্যটকের চাপ বেশি। খাবার দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার রেস্তোরাঁয় আগে কাজ করতো ২০০ জন। বৃহস্পতিবার থেকে ৪০০ জনের ওপরে কাজ করছে। তারপরও সামাল দিতে পারছি না।

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আমাদের ৪৫০ হোটেলের সব বুকিং হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে রুম চাইলেও তাদের দিতে পারছি না। আশা করি এই তিন দিনে সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক সমাগম হবে।

পর্যটকদের দায়িত্বে নিয়োজিত লাইফগার্ড কর্মী ইউছুফ বলেন, কাল থেকে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের চাপ বেশি। যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি গাজী মিজান বলেন, কক্সবাজার জেলায় যত পর্যটক স্পট রয়েছে সেখানে তিন দিনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের যেন কোনো প্রকার হয়রানি না হয় সেজন্য হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।

কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা প্রস্তুত।

পাঠকের মতামত