
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হেফাজতে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী দুর্জয় চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী চকরিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন। এ সময় কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের ১০ থেকে ১২ আইনজীবী থানায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহারে চকরিয়া থানার সাবেক ওসি শফিকুল ইসলাম, পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া, দুই কনস্টেবল, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম এবং সহকারী শিক্ষক, অফিস সহায়কসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এজাহারটি গতকাল পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, দুর্জয় চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তাঁকে বিতাড়িত করার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানমসহ স্কুলের দুই সহকারী শিক্ষক ও অফিস সহায়ক নানাভাবে চক্রান্ত করে আসছিলেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি দুর্জয়ের ল্যাপটপে রক্ষিত ছিল। এসব ধামাচাপা দিতে প্রধান শিক্ষক ও তার লোকজন দুর্জয়কে চিরতরে সরিয়ে দিতে ফন্দি করে আসছিলেন। এরই অংশ হিসেবে দুর্জয়ের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলে জোর করে গত বৃহস্পতির রাত ১০টায় থানায় নিয়ে যায়। চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে থানা হাজতে আটকে রাখেন। পরে ওসি, এএসআই ও কনস্টেবলের সঙ্গে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে গোপন আঁতাত করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্য দুই শিক্ষক ও অফিস সহায়ক। এরপর আসামিরা মিলে দুর্জয়কে হাজতে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালায়।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী পিন্টু বড়ুয়া বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পেতে বাদী কমল চৌধুরীকে সহায়তা করার জন্য চকরিয়া থানায় গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারের (২৮ আগস্ট) মধ্যে যদি মামলাটি রেকর্ড করা না হয়, তাহলে বাদী আদালতে নালিশি মামলা করবেন।
জানতে চাইলে চকরিয়া সার্কেলের এএসপি অভিজিৎ দাস বলেন, ‘দুর্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় এর আগে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সেটির তদন্তও চলছে। তাই এজাহার দায়েরের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।’
চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্জয়ের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম। ওসি শফিকুল ইসলাম ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্জয়কে হাজতে আটকে রাখেন। পরদিন ভোরে হাজতে ঝুলানো অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই চকরিয়া থানার এএসআই ও দুই কনস্টেবল এবং পরে ওসিকে প্রত্যাহার করেন জেলা পুলিশ সুপার।
পাঠকের মতামত