ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২১/১১/২০২২ ৯:৪২ এএম
ফাইল ছবি

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নে সমুদ্রতীরে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ার তোড়জোড় চলছে। শিল্প গ্রুপ আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড এরই মধ্যে ৫০৪ দশমিক ৬৫ একর জমি সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। শুধু তাই নয়, অনুমোদন পাওয়ার আগেই জমি ভরাটের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি জানতে পেরে বন বিভাগ কাজ বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জাহাজ নির্মাণ শিল্প স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রতীরের অন্তত তিন লাখ বাইন ও কেওড়া গাছ (ম্যানগ্রোভ) কাটা পড়বে। এসব গাছের বয়স ৩০-৩৫ বছর। ম্যানগ্রোভ না থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে ওই এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ ছাড়া বন্দোবস্ত চাওয়া জমিতে লবণ ও চিংড়ি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন- এমন ১৫ হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে চরম সংকটে পড়বেন।

সংশ্নিষ্টরা জানান, জাহাজ নির্মাণ শিল্প স্থাপনে গত ১ আগস্ট আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল্লাহেল বারী ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ১৬ আগস্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৫০৪ দশমিক ৬৫ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত চেয়ে আবেদন করেছেন। বন্দোবস্ত দেওয়ার উপযোগিতা, জমির মালিকানার বিবরণ, বাস্তব অবস্থা ও আইনানুগ বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় ভূমি অফিসকে তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। এর পর সরেজমিন তদন্ত করে ১৯ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল করিম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জমির কিছু অংশ বালুচর হিসেবে খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত। ১৬৯ একর মহেশখালী চ্যানেলের ভরাট জমিও এখানে বনায়ন হয়েছে। ২৫০ একরের বেশি জমি বন বিভাগের এবং ৩৩৫ একর জমিতে শুস্ক মৌসুমে লবণ ও বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি চাষ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন পিয়ারু জানান, যুগ যুগ ধরে চৌফলদণ্ডীর জমিতে লবণ ও চিংড়ি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। সেখানে শিল্পকারখানা হলে মানুষগুলোকে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকবে হবে।

এ বিষয়ে আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বারীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। কক্সবাজারে অবস্থান করা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যবস্থাপক (শিপইয়ার্ড) দুলাল মিয়া সমকালকে বলেন, ‘আমরা কাজ করতে নয়, জমি দেখতে এসেছি। জমি বন্দোবস্তের বিষয় দেখভাল করে কোম্পানির অন্য বিভাগ।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প স্থাপনে জেলা প্রশাসন থেকে কাউকে অনুমতি কিংবা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ‘চৌফলদণ্ডীর সমুদ্র তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বনসমৃদ্ধ এলাকায় মাটি ভরাটে বাধা দেওয়ার পর তা বন্ধ রয়েছে। সুত্র: সমকাল

পাঠকের মতামত