প্রকাশিত: ০১/০৫/২০২২ ১২:৫৫ পিএম , আপডেট: ০১/০৫/২০২২ ৪:০৭ পিএম

কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির আড়ালে কৌশলে নেতাদের ‘নিজস্ব বলয়’ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য তৃণমূলের কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কট্টর বিরোধীরাও। দলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তালিকায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান হচ্ছে না।

এমনকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। উল্টো আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসাবে বিএনপির দলীয় পদবিধারী লোকজনরাও তালিকাভুক্ত হচ্ছেন। বিএনপির লোকজনকে কাউন্সিলর হিসাবে ‘ভাড়ায়’ এনে তাঁদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নেতারা নিজ নিজ তাবেদারি লোকের কমিটি করে নিচ্ছেন। এমনকি জঙ্গিসম্পৃক্ত লোকজনসহ ইয়াবা কারবারিরাও বনে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা।
অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ত্যাগী নেতাকর্মীরা চুপ হতে বাধ্য হচ্ছেন হাইব্রিড নেতাদের দাপটের মুখে। সাংগঠনিক অনিয়মের কোনো প্রতিবাদ করলেই মারধরের শিকার হতে হয়। ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির লোকজন নিয়ে কাউন্সিলর তালিকা করার বিষয়টি একদম ওপেন সিক্রেট।

একের পর এক ওয়ার্ড পর্যায়ে এরকম ‘অপরাজনীতি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এর মধ্যে কয়েকটি কমিটি বাতিলসহ স্থগিতও করা হয়েছে। এসব ঘটনায় কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি হাসি-ঠাট্টা আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে পরিণত হয়েছে।

আগামী জুন-জুলাই মাসে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবার কথা রয়েছে। ২০১৬ সালে হয়েছিল এ কমিটি। এ কারণে বর্তমানে ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের সম্মেলন চলছে। গত ২৩ এপ্রিল দলের চলমান সাংগঠনিক কার্যক্রমে সবচেয়ে জঘন্য ঘটনাটি ঘটে। ওই দিন সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে মতবিরোধের জের ধরে দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি।
বদি ওই এলাকার সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দলে আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে দমাতে সাবেক এমপি বদি সভাস্থলে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ঈসমাইল মনুসহ তিনজনকে বেধড়ক পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনার দু’দিন পর মহেশখালীর ধলঘাট ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২৭ মার্চ পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের সামনেই মারধর করা হয় জহিরুল ইসলাম নামে এক নেতাকে। শুধু তাই নয় নেতারা পদপদবি ধরে রাখতে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকেও দলের কাউন্সিলর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলনে বিএনপির লোকজনদের গণহারে কাউন্সিল করার ক্ষেত্রে উখিয়া ও টেকনাফ এগিয়ে রয়েছে। উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৬ জন এবং পালংখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫১ জনের তালিকায় রয়েছেন ২৮ জন বিএনপির নেতাকর্মী।
এ রকম প্রতিটি ওয়ার্ডের তালিকায়ও রয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সম্মেলনে গঠিত কমিটির নেতা বানাবেন দলের আদর্শিক নেতাদের। কিন্তু যারা ‘পেশিশক্তি’র মাধ্যমে দলের নেতা হতে চান তারাই ত্যাগীদের বাদ দিয়ে কেবল ভোটাধিকারের জন্য বিএনপির লোকজন ভাড়ায় এনে কাউন্সিলর তালিকা করার কাজে জড়িত।

হলদিয়া পালং ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল আলম শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় আমার দলের ২৫/২৬ জনের নাম দেখে হতবাক হইনি। কারণ তাদের ভাড়ায় নেওয়া হয়েছে কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে নেতা বানানোর জন্য। তদুপরি আদর্শিক এবং ইমেজ সংকটের লোকজন প্রতিপক্ষে যত বেশি হবে ততই বিএনপির জন্য সুবিধা।’

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকেও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি হয়তো-বা আমাকে না জানিয়ে তাদের কমিটিতে রেখেছিলেন। তবে আমি সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি।

অপরদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মঞ্জুর এসব বিষয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, আমার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর করা হয়েছে মনগড়া। সেখানে দলীয় লোকের চেয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন স্থান বেশি পেয়েছে। কিন্তু আমরা কিছুই বলতে পারছি না করতেও পারছি না। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের রণাঙ্গণে লড়াকু ভূমিকা পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমদ চৌধুরীর পরিবারের সকল সদস্যদের কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ যেসব ওয়ার্ড কমিটি এর মধ্যে করা হয়েছে সেগুলোর কোথাও তার স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি।

দেশের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ নিয়ে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ তোলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সীমান্তের আসনটি জুড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ইয়াবা কারবারি ও জঙ্গিসম্পৃক্ত লোকজনদের নিয়ে কৌশলে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমার আশঙ্কা, আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত এবং নিঃশেষ করতে নেপথ্যে বড় শক্তি নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে।’

এসবের নেপথ্যে তিনি সীমান্তের একজন ‘গডফাদার’ জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন। এসব বিষয়ে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে সর্বত্র জগাখিচুড়ি অবস্থা চলছে। তিনি এসব অনিয়ম নিয়ে ঈদের পর শুদ্ধি অভিযানে নামার কথা জানান।

এসব বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির লোকজন নিয়ে কাউন্সিলর তালিকার মাধ্যমে যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে তা বাতিল করা হবে। তদুপরি দলে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রেও যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হবে।

অপরদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমার দলীয় লোকজন যারাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকাভুক্ত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, তাদের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...