সুজাউদ্দিন রুবেল :
রেড জোন ঘোষণার পর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারকে লকডাউন করা হলেও এখনো কমেনি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তাই কক্সবাজারকে অন্তত আরও ১৫ দিন লকডাউনের আওতায় এনে কিছু ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর সবার সাথে বসে কক্সবাজারে লকডাউনটা বাড়ানোর চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, এ নিয়ে জেলায় ৩৯ জন রোহিঙ্গা ও ১১ জন এনজিও/আইএনজিও কর্মিসহ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৬৯৪ জনে। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ৭৭০ জন, রামু উপজেলার ১২১ জন, উখিয়া উপজেলার ২০৯ জন, টেকনাফ উপজেলার ১৩৬ জন, চকরিয়া উপজেলার ২৬১ জন, পেকুয়া উপজেলার ৭৯ জন, মহেশখালী উপজেলার ৫৮ জন ও কুতুবদিয়া উপজেলার ১০ জন বাসিন্দা রয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তদের মধ্য সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছে ৩৭০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। এদের মধ্যে ৩ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে বেশী আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার পৌর এলাকায়। এ সংখ্যা আক্রান্ত প্রায় শতাধিকের মধ্যে ১৫ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের (কমেক) অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপম বড়ুয়া জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে কমেকের ল্যাবে করোনা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭০ দিনে কমেক ল্যাবে সন্দেহভাজন মোট ১১ হাজার ৫৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। এতে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯১১ জন। কমেকের ল্যাবে আক্রান্ত হওয়া ১ হাজার ৯১১ জনের মধ্যে কক্সবাজারের ৩৯ জন রোহিঙ্গা ও ১১ জন এনজিও কর্মিসহ ১ হাজার ৬৯৪ জন বাসিন্দা রয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত অন্য ২১৭ জন জেলার পার্শ্ববতী বান্দরবান জেলাসহ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া, সীতাকুন্ড ও চাঁদগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, এপ্রিল মাসে করোনা আক্রান্ত ছিল মাত্র ৩৯ জন, মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৬১৮ জনে। কিন্তু জুন মাসে এসে সেটি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৪ জনে। তাই কক্সবাজারে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে বাজার ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া দাবি চিকিৎসকদের।
এব্যাপারে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, দু’সপ্তাহের লকডাউনটা শেষ দিকে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লকডাউনের তেমন কোন ফলাফল পাওয়া যায় নি, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সংখ্যাও কমে আসেনি। কারণ কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন বাজার ব্যবস্থা, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেয়া ও স্যাম্পল দেয়া ব্যক্তিদের অবাধে ঘোরাফেরা থেকে বিরত রাখতে নজরদারি বাড়ানো।
তিনি বলেন, আনুমানিক আরও দু’সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো উচিত। তারপরই ফল আসবে কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কমছে না বাড়ছে। আর এই লকডাউনে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে যেমন প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭-৮টা ভ্যানের মাধ্যমে বাজার রবি ও বৃহস্পতিবার চালু করা। এরপর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের বাসায় আলাদা রুমে থাকার ব্যবস্থা নেয় তাদেরকে দ্রুত আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যারা বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর কিংবা সর্দি কার্শিতে ভুগছেন তারা বাসায় চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত স্যাম্পল দেয়া। এতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। এছাড়াও যারা স্যাম্পল দিয়ে আসার পর রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে তারা বাইরে ঘোরাফেরা না করে অবশ্যই বাসায় অবস্থান নিতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে যারা স্যাম্পল দিয়ে আসার পর বাইরে অবাধে ঘোরাফেরা করছে। সুতরাং প্রশাসন জেলায় করোনা আক্রান্ত সংখ্যা কমিয়ে আনার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। এখন প্রশাসনের এই চেষ্টার সাথে জনগণকে সহযোগিতা করা খুবই প্রয়োজন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমান ডিজিজ ট্রেন্ড ও পরিসংখ্যান দেখে এটা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে কক্সবাজারে বিশেষ করে পৌরসভায়। তাই এই পর্যায়ে লকডাউন থেকে উল্লেখযোগ্য কোন সুফল পাওয়া কঠিন। কারণ করোনা এখন ঘরে ঘরে, অলিতে-গলিতে। এর জন্যে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, রাস্তায়, দোকানে আড্ডা দেয়া প্রতিরোধ করা, প্রয়োজনে কঠোর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি আরোপ করা, অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া, নির্দিষ্ট বাজারের পরিবর্তে ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক ভ্যান বা ফেরিওয়ালার মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগান দেওয়া। করোনা পরীক্ষা হোক না হোক অসুস্থ হলেই আলাদা হয়ে যাওয়া, ঘরের ভেতরেই মাস্ক ব্যবহার ইত্যাদি। লকডাউন একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদে অবাস্তব, অন্যদিকে এই স্টেজে অকার্যকর যদিনা আমরা সচেতন না হই, সচেষ্ট না হই।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবর রহমান বলেন, লকডাউনটা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা আছি। এটা সবার সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই লকডাউনটা অন্তত আরও ১৫ দিন বাড়ানো উচিত। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই দ্রুত এই জেলাকে করোনামুক্ত করতে। এতে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।