ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৯/০৪/২০২৩ ১২:৪১ পিএম

গভীর সাগরে মাছধরা ট্রলারে ডাকাতি। এরপর ক্ষুব্ধ মাঝিমাল্লারা এক জোট হয়ে ডাকাতদের ওপর হামলা করেন। নৃশংসভাবে খুন করে ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়া হয়। লাশ উদ্ধারের আট-নয় দিন আগে থেকেই এসব তথ্য জানতে পেরেছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু সব জেনেও নিশ্চুপ ছিল সবাই। ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।

সাগরে খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা এমন অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তাঁরা। কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি; বরং কেউ কেউ ‘ডাকাতের পরিবার’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। একপর্যায়ে লাশ উদ্ধারের জন্য নিজেরা চাঁদা তুলে সাগরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের অসহযোগিতা ও বাধার মুখে তা-ও সম্ভব হয়নি। শেষমেশ তাঁরা লাশ উদ্ধারের আশাও ছেড়ে দেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে সরেজমিনে কথা বলে এসব তথ্যের সত্যতাও পাওয়া যায়। খুনের পর লাশ গুম করা হয়েছে, তা জানার কথাও স্বীকার করেন কর্তারা।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রকম একটি খবর আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। ১০-১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরার জন্য বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা আর ফিরে আসেননি।’

২৩ এপ্রিল কক্সবাজারের উপকূলবর্তী বাঁকখালী নদীর মোহনায় মাছধরা ট্রলারে ১০ জনের লাশ পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি ছিল মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠেছড়ি এলাকায়। এই ছয়জনের মধ্যে আবার এক পরিবারেরই পাঁচজন। বাকি চারজনের তিনজন চকরিয়ার আর অন্যজনের মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নে। সাগরে মাছধরা ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়ে ক্ষুব্ধ জেলেদের সম্মিলিত হামলায় তাঁরা নিহত হন বলে জানা গেছে।

মহেশখালীর মিঠেছড়ির একই পরিবারের নিহত ছয়জনের মধ্যে একজন ওসমান গনি (১৭)। তার বোন মাইসা আজকের পত্রিকাকে জানান, পরিবারের সদস্যরা সাগরে যাওয়ার প্রথম দুই-তিন দিন খুব বেশি চিন্তা করেননি। কিন্তু ১০ তারিখের দিকে জানতে পারেন, সাগরে মাছধরার ট্রলারটি ডুবে গেছে। এক দিন পর শোনেন, তাঁর ভাইয়েরা নাকি ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন। অন্য মাঝিরা পিটিয়ে মেরে ট্রলার ডুবিয়ে দিয়েছেন।

এই পরিবারের পক্ষে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করেন আলী আজগর নামের এক যুবক। তিনি তাঁদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। তাঁর দাবি, তিনিই এই পরিবারের মধ্যে শহর-বন্দরে হাঁটাচলা করা একমাত্র মানুষ।

আজগর আজকের পত্রিকাকে জানান, খুন হয়েছে এটা শোনার পর তাঁরা প্রথমে যান মহেশখালী থানায়। কিন্তু থানা-পুলিশ তাঁদের কোনো কথা শুনতে চায়নি। সাগরের মধ্যে কিছু হলে থানা-পুলিশের কিছুই করার নেই বলে জানানো হয় তাঁদের। ভুক্তভোগী পরিবার তখন এলাকার মান্যগণ্য মানুষদের দিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলান। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জিডি নিব না কেন, এক শটা জিডি নিব। তবে ওনাদের অভিযোগটা ছিল মধ্যসাগরের ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বাইরে অন্য ইউনিটগুলোও কাজ করে।’

আর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘যদি এই অভিযোগ সত্য হয়, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজগর আলী জানান, থানায় যাওয়ার পরদিন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অভিযুক্ত জলদস্যু নুরুল কবিরের বাবা মোহাম্মদ হোসেনও। খবর চলে যায় চকরিয়া থেকে আসা তিন পরিবারেও। সব কটি পরিবার মিলে ১৩ এপ্রিল যান বদরখালী কোস্ট গার্ড স্টেশনে। সেখানে কমান্ডারকে সাগরে নেমে ডুবে যাওয়া নৌকার খোঁজ নিতে অনুরোধ করেন তাঁরা। কিন্তু সেখানেও কোনো সহযোগিতা মেলেনি।

আলী আজগরের দাবি, কোনোভাবেই কোস্ট গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তদের রাজি করানো যায়নি। তাঁরা জানান, মাঝ সাগরে যাওয়া-আসায় অনেক তেল লাগবে, যা তাঁদের বরাদ্দে সব সময় থাকে না।

কোস্ট গার্ডের মহেশখালী স্টেশন কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন ট্রলারডুবিতে নিহতের ঘটনাটি জানার কথা স্বীকার করলেও নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে মনে করেন না। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি বরং ভুক্তভোগী পরিবারকে সাগরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, কোন জায়গায় এ ঘটনা ঘটতে পারে, সেখানে যাবেন। কিন্তু জায়গা না চেনার কারণে যেতে পারেননি।

পুলিশ-কোস্ট গার্ডের কাছে হতাশ হয়ে স্বজনহারা ভুক্তভোগীরা ১৪-১৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিবার ও পাড়াপ্রতিবেশীর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা নিজেরাই ডুবে যাওয়া ট্রলার খুঁজতে যাবেন। কিন্তু তাতেও বাধা আসে উপজেলা প্রশাসন থেকে।

কারা বাধা দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে আলী আজগর নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন উপজেলার দুই বড় কর্তা একসঙ্গে ছিলেন। তাঁদের একজন আমাদের “ডাকাতের পরিবার” বলে হাসাহাসিও করেন। তাই সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানান। আমরা নিজেরা গিয়ে বিপদে পড়লে সেই দায়ও তাঁরা নেবেন না। এরপর লাশগুলো ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয় পরিবারগুলো।’

জানতে চাইলে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলায় কার কাছে তারা গিয়েছিল, সেটা আমি জানি না।’ তাঁর উল্টো প্রশ্ন, ‘আমার কাছে আসবে কেন? আমার এলাকার ভেতর হলেও সেই গ্রাম অনেক দূর। ঘটনার আমি কিছু জানি না।’

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ করার দায়দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এখানে ডুবে যাওয়া ট্রলার শনাক্ত করা, ওঠানোর কাজ করবে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ। আমার সরাসরি কিছু করার ছিল না।’

এর মধ্যে শুধু চকরিয়া থেকে সাগরে গিয়ে নিহত সাইফুলের ভাই ওমর হাকিম লোকমুখে শোনা হত্যা ও গুমের ঘটনা বর্ণনা করে অনলাইনে চকরিয়া থানায় একটি জিডি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু জিডির পর থানা-পুলিশ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

সুত্র: আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

উখিয়ার থাইংখালীর আলাউদ্দিন ও ছাত্তার সিন্ডিকেটের মাটিভর্তি ডাম্পার জব্দ

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গৌজঘোনা এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় সাবাড় করছে মো. আলাউদ্দিন ও ...

রোহিঙ্গা শিবিরে ইফতার যে রকম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা ...