ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৮/০৪/২০২৩ ১০:২০ এএম

নতুন বছরকে বরণ করে নিতে কক্সবাজারে চলছে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব। সোমবার (১৭ এপ্রিল) শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী উৎসবে জল নিক্ষেপে একে অপরকে করে পরিশুদ্ধির আহবান। তীব্র দাবদাহের মাঝে এই উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলোতে জলকেলিতে ব্যস্ত সবাই। আর নতুন বছরে বিশ্বের সুখ-শান্তি ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশা আয়োজকদের।

কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া রাখাইনপল্লিতে সাজানো একটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের এক পাশে জলভর্তি দুটি কাঠের নৌকা। নৌকার এক পাশে রাখাইন তরুণীর দল, প্রত্যেকের হাতে পানি ছুড়ে মারার পাত্র। রয়েছে শিশুরাও।
ঢোল-বাজনা, গানে তরুণ-তরুনী সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শোভযাত্রা সহকারে যাচ্ছে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে। এরপর দাঁড়ান নৌকার এক পাশে বসা তরুণীদের সামনে। তরুণদের হাতে থাকে পাত্রভর্তি মঙ্গলজল। পছন্দের তরুণীকে লক্ষ্য করে এ জল ছুড়ে মারেন তরুণ। তরুণীর ইচ্ছা হলে তরুণের ডাকে সাড়া দেন এবং তরুণকে লক্ষ্য করে জল ছুড়ে মারেন। এভাবে প্যান্ডেলে জোড়ায় জোড়ায় চলে তরুণ-তরুণীদের জল ছুড়ে মারার সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাং পোয়ে’। বাংলায় যাকে বলে ‘জলকেলি’ উৎসব।
পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ পয়লা বৈশাখ থেকে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে থাকেন। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী চলে ‘সাংগ্রাং পোয়ে’ উৎসব।

রাখাইনপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র দাবদাহে ঠান্ডা জলে শরীর ভিজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। কয়েকটি প্যান্ডেলে শিশু-কিশোরেরাও অংশ নিয়েছে জলকেলিতে। এ জন্য শহরের হাঙরপাড়া, পেশকারপাড়া, বড়বাজার, চাউলবাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়কে তৈরি করা হয়েছে ১১টি প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকাজে সাজানো হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। রাখাইনদের প্রতিটি বাড়িও সেজেছে নতুন সাজে। উৎসবে আসা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার পরনে নতুন কাপড়।
রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষপঞ্জিকা মতে, ১৬ এপ্রিল (রবিবার) রাতে শেষ হয়েছে ১৩৮৪ মগীসন। ১৭ এপ্রিল (সোমবার) শুরু হল রাখাইন নতুন বর্ষ ১৩৮৫ মগীসন। আর এই মগীসনকে বিদায় ও বরণকে সামনে রেখে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩ দিনের সাংগ্রাইং পোয়ে বা ঐতিহ্যবাহি জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন প্যান্ডেলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাখাইন ব্যান্ড দলের পরিবেশনায় গান ছাড়াও ঐতিহ্যবাহি নৃত্য পরিবেশন হয়েছে।
রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ বলছেন, পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে জলে জলে পরিশুদ্ধির জন্য এই উৎসব। টানা ৩ দিন চলবে এই উৎসব।
রাখাইন তরুণ ক্যা থিং জানান, নতুন বর্ষকে বিদায় ও বরণের এই ঐতিহ্যবাহি সামাজিক উৎসব। এ উৎসব ঘিরে ৩ দিন ব্যাপী জলকেলি ছাড়াও বাড়িতে বাড়িতে রান্না হচ্ছে নিজস্ব খাবার।
এটাকে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে তোলার উৎসব মন্তব্য করে উকি চিং রাখাইন জানান, একে অপরের সাথে জল নিক্ষেপ ছাড়াও নিজের মধ্যে সামাজিক বন্ধন ও ঐক্য তৈরিতে এ উৎসব ভূমিকা রাখে।
আরেক রাখাইন তরুণ উচিং থেন জানান, তীব্র দাবদাহ চলছে। এরমাঝে জলকেলি উৎসব এক প্রকার প্রশান্তি এনে দিয়েছে। জলকেলির মাধ্যমে যেমন পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে জলে জলে পরিশুদ্ধি হচ্ছি, ঠিক তেমনি প্রশান্তিও এনে দিয়েছে।
এ উৎসবের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানকারি কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেন লা জানান, এবার কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীতে ১১ টি প্যান্ডেল তৈরি হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার মধ্যে ৩ দিন উৎসব চলবে। এখানে কেবল রাখাইন নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষও আসছেন। যেটার কারণে সম্প্রীতির একটি বন্ধনও তৈরি হয়। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়ার উখিয়ার রাখাইন পল্লী ঘিরে অর্ধ-শতাধিক প্যান্ডেলে ৩ দিনব্যাপী এ উৎসব চলবে।
রাখাইনদের ৩ দিনের জলকেলি উৎসব সার্বিক সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সকল প্রকার কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। তিনি জানান, জলকেলি উৎসবটি রাখাইনদের হলেও এটি কালক্রমে এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এর জন্য পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে রয়েছেন। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরধারীও বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসবের শেষ করা সম্ভব হবে।

পাঠকের মতামত

উখিয়ার থাইংখালীর আলাউদ্দিন ও ছাত্তার সিন্ডিকেটের মাটিভর্তি ডাম্পার জব্দ

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গৌজঘোনা এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় সাবাড় করছে মো. আলাউদ্দিন ও ...