[caption id="attachment_22037" align="alignleft" width="600"] বাম থেকে : কক্সবাজার কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী ও উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম।[/caption]
এমন কোনো দিন নেই, নিজের নাম নিয়ে যেদিন বিড়ম্বনার মুখে পড়েননি তাঁরা। তিনজনেরই নাম ফজলুল করিম। তিনজনই আবার কলেজের অধ্যক্ষ। ওই তিন কলেজও কক্সবাজার জেলায়। একজনের চিঠি যায় অন্যজনের কাছে। একজনের ফোন চলে যায় অন্যজনের নম্বরে। প্রতিদিনই এমনই নানা বিড়ম্বনায় পড়েন তাঁরা।
অধ্যাপক ফজলুল করিম তিনজনের মধ্যে বয়সে বড়। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা তিনি।
কক্সবাজার সরকারি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়ে কক্সবাজার কমার্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানেই তিনি এখন কর্মরত।
দ্বিতীয়জন অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা এই শিক্ষাবিদ কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। এর আগে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তৃতীয়জন ফজলুল করিম উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ। কক্সবাজারের উখিয়া কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা তিনি।
কক্সবাজারের তিন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে একই নামের ওই তিন শিক্ষাবিদ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনজনের নামের মিল থাকায় তাঁরা প্রায়ই সম্মুখীন হন বিড়ম্বনার।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মোবাইল-টেলিফোনে সমানে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। একদিন একজন মোবাইল করে তাঁর মেয়ের পড়ালেখার সমস্যার কথা বলতে লাগলেন অনবরত। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষোভ যা-ই আছে, এর সবই ঝেড়ে এবার আমার কথা শুনে হতবাক! আসলে ভদ্রলোকের মেয়ে আমার কলেজের ছাত্রী নয়। ’
‘আমরা তিন ফজলুল করিমের বিড়ম্বনা যেন মহাবিড়ম্বনা। রাজশাহী থেকে আমার কলেজ জীবনের এক বন্ধু মোবাইলে জানতে চায়, দোস্ত কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম তুমি কক্সবাজার কমার্স কলেজে রয়েছ। আবার পরে দেখলাম কক্সবাজারের উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও তোমার নাম। এখন আবার পত্রিকায় দেখছি, তুমি কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।
আরে মিয়া তোমাকে কি প্রতিসপ্তাহেই কর্তৃপক্ষ একবার করে বদলি করে নাকি? এর পর দোস্তকে দীর্ঘক্ষণ ধরে বুঝালাম তিন অধ্যক্ষ ফজলুল করিমের বিড়ম্বনার সেই নানা কাহিনি। ’-যোগ করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম।
উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম জানালেন তাঁর বিড়ম্বনার কথা। বলেন, ‘সিলেট শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বড়ছেলে লেখাপড়া করে। একদিন সেখানকার একজন অধ্যাপক আমার সন্তানের সাথে আলাপকালে পরিচয় নিতে গিয়ে বললেন, তোমার বাবাকে আমি চিনি। তিনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
পরে জানতে পেরেছি, সিলেটের ওই অধ্যাপকের আসল বন্ধু হলেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম-আমি ফজলুল করিম নই। ’
বিড়ম্বনার কথা জানাতে গিয়ে উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘একদিন আমাকে মোবাইল করে একজন অভিভাবক কক্সবাজার কমার্স কলেজের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করতে শুরু করলেন। আমি তাঁকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনি ভুল নম্বরে ফোন দিয়েছেন। ভদ্রলোক কিছুতেই এটা মানতে নারাজ। বলতে লাগলেন, আমি অধ্যক্ষ ফজলুল করিম সাহেবের মোবাইলে কল করে কথা বলছি। সুতরাং আপনাকে শুনতেই হবে। ’
তাঁর আরেকটি ঘটনা, ‘এক ব্যক্তি একদিন মোবাইলে আমার নিকট জানতে চান, ডাকাত দলের মারধরে আমি ক্ষতবিক্ষত হয়েছি কিনা? তাঁকে পাল্টা বললাম, কোথায় আবার ডাকাত, কোথায় আমি মার খেলাম? পরে খবর নিয়ে জানতে পারি, আমি ছাড়া অন্য দুই কলেজের একজন অধ্যক্ষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারা ঢালায় ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। এ খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
সেই খবর পড়েই হয়তো বা আমরা তিন অধ্যক্ষের কোনো একজন সুহূদ সমবেদনা জানাতে ফোন করেছিলেন। বাস্তবে বিষয়টি নিয়ে আমি আগেভাগে জ্ঞাত ছিলাম না। ’
কক্সবাজার কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফজলুল করিম তাঁর বিড়ম্বনার কথা বললেন এভাবে। ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাকে ফোন করে কুশল বিনিময় ছাড়াই আফসোসের সুরে প্রশ্ন করল, তুমি এত নিচের কাতারে কখন নামলে?
তার এ রকম কথা শুনে আমি তো হতবাক। পরে সে ব্যাখ্যা করে জানাল, সংবাদ মাধ্যমে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রশ্ন, আমি কেমনে সেই কাজ করলাম? পরে নাম নিয়ে বিড়ম্বনার কথা শুনে সে শান্ত হয়। ’
কমার্স কলেজ অধ্যক্ষ ফজলুল করিম আরো বলেন, ‘তাঁর নামে আসা বেশির ভাগ চিঠিপত্র কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের নিকট চলে যায়। আর ফোনের বিড়ম্বনা তো নিত্যদিনের। ’ কালেরকন্ঠ