উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬/০৯/২০২২ ২:০১ পিএম

গেল আগষ্টের ২৫ তারিখ। কক্সবাজার শহরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ভালবাসার মানুষ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন (২৪) এর সাথে বাগদানের অনুষ্ঠানে বসেছিলেন মাহমুদা আনজুমান মিলি (২২)। হঠাৎ বর পক্ষের লোকজন চলে যেতে দেখে এনগেজমেন্টের আনন্দঘন পরিবেশে উৎফুল্ল মিলি (কনে) বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তিনি জানতে পারেন খাবারের অজুহাত দেখিয়ে অনুষ্টানস্থল থেকে বরকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা-মা।

এরপর থেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিলি তার ভালবাসার সাজ্জাদকে ফিরে পাওয়ার আশায় কাবিননামা ও যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের কাছে যান। সেদিন থেকে তিনি বহুবার তার শ্বশুরবাড়ির সাথে যোগাযোগ করেছেন; যা তার মতে– সহস্রাধিক বার। কিন্তু সাজ্জাদ হোসেন তার প্রতি শুধু উদাসীনতা ও অবহেলা দেখিয়েছেন। উল্টো শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে লাঞ্ছনা এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রতিনিয়ত প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন। সাজ্জাদ হোসেন কক্সবাজার শহরের বৃহত্তর পাহাড়তলি সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ পাহাড়তলি এলাকার বাসিন্দা মো: ইউসুফ সওদাগরের ছেলে।

মিলি দাবি করেছেন, এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান করে বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ায় তাকে সামাজিকভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের আগে সাজ্জাদ তাকে গোপনে ছেড়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে তার তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হতোনা। কিন্তু বিষয়টি দু’পারিবারের মাধ্যমে এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে তিনি এখন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। তার কারনে ওই এলাকার মানসম্মানে আঘাত লেগেছে বলে তাদের পরিবার তাকে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এতে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কোন পথ খোলা নেই বলে জানিয়েছেন মিলি।

এছাড়াও একটি অনুষ্টানে বর পক্ষের লোকজন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে চলে যাওয়ায় সমাজেও নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাদের পরিবারে। নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন মিলি। যার নং ৭৭৮/২২। এখন তিনি তাদের হুমকির মুখে আছেন।

মিলির পরিবার এবং মামলার নথি থেকে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৯ সালে সাজ্জাদ মিলিকে গোপনে বিয়ে করে। বিষয়টি জানাজানি হলে সাজ্জাদের পরিবার প্রথমে মিলিকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে রাজি হয়নি। পরে নানা কারণে তারা রাজি হলেও এনগেজমেন্ট অনুষ্টানের বরপক্ষের অতিথি আপ্যায়নে বাহারী রকমের খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের দাবী করে বসেন সাজ্জাদের পরিবার। তাদের উদ্দেশ্যে ছিলো যে কোনভাবে মিলিকে এড়িয়ে যাওয়া। তারপরও তাদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে আর্থিক দৈন্যদশায় পড়লেও দুই পরিবারের সম্মতিতে গেল আগষ্টের ২৫ তারিখ তাদের বিয়ের এনগেজমেন্ট অনুষ্টান আয়োজন করা হয়। হিসাবের বাইরে বরপক্ষ থেকে অতিথি আসায় খাবারে কিছুটা টানাপোড়ন পড়লে অনুষ্টান শেষের দিকে হঠাৎ সাজ্জাদের পক্ষ থেকে আসা লোকজন তাদের যথাযথ আপ্যায়ন করা হয়নি দাবি করে একে একে সবাই চলে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে অনুষ্টানের স্টেজে বসে থাকা বর সাজ্জাদকে ফুসলিয়ে টেনে নিয়ে চলে যায় তার মা। এরপর থেকে সাজ্জাদ মিলির সব নাম্বার ব্লক করে এবং পুরো পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

পরে সাজ্জাদের দোকানে গিয়ে কেন তার ছেলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন এমনটি দাবি করে তার মা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেও শুনা যায় প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও রেকর্ডে।

মিলি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, অনুষ্টানের খাবার হিসেবে তারা আমাদের কাছ থেকে কবুতর, হাঁস, গরু, দেশি মুরগী, ইলিশ, গলদা চিংড়ি ও খাসিসহ ১৪ রকমের বাহারী রকমের খাবার দাবি করেন। আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা তেমন না হলেও তাদের চাহিদা মত আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে মুলত সামন্য খাবারের অজুহাত দেখিয়ে তারা আমাদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করেছেন।

মিলি আরোও বলেন, সাজ্জাদের সাথে প্রেমের সর্ম্পের পর দুইজন ই ১৯ সালে বিয়ে করে বৈধ সম্পর্কে জড়ায়। এতগুলা বছর আমি তাকে যথাসম্ভব সাপোর্ট দিয়ে এসেছি। তার জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। সে কোন সমস্যায় পড়লে শিক্ষার্থী হয়েও বাবার জমানো টাকা তার হাতে তুলে দিয়েছি। আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে সমস্যা হলে তা অনুষ্টানের আগে কেন বললেন না তারা। এখন আমাদের সবার সম্মান নষ্ট করার পর কেন সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হচ্ছে; তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। পরিবারের লোকজনের কাছেও আমি এখন অবহেলিত হয়ে পড়েছি। মিলি এবং তার পরিবারে এমন অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে সাজ্জাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে মিলি তার স্ত্রী বলে স্বীকার করেন। অনুষ্টানে তার বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান না করার করণে তিনি এই সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছেন বলে জানিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে মিলি তাকে বিয়ে করেছেন বলেও সাজ্জাদ দাবি করেন।

কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমিও অতিথি হিসেবে ছিলাম। যথাযথ সম্মান করা হয়নি দাবী করে হঠাৎ সাজ্জাদের বাবাকে কান্না করে চলে যেতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি মিমাংশা করে দিতে চেষ্টা করলেও মামলা পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়ায় তা আর হয়ে উঠেনি। সুত্র: বিডি২৪লাইভ ডটকম

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা শিবিরে ইফতার যে রকম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা ...

লাইসেন্সের কোন কাজ নেই, টাকা দিলে লাইসেন্স লাগে না!- উখিয়ার ব্যবসায়ী সাদ্দাম

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই কথিত লেভেল লাগিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারির পানি বিক্রি করেন উখিয়ার সাদ্দাম মটরসের স্বত্তাধিকারী ...