কক্সবাজার জেলার ৬৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক লক্ষ ৫৩ হাজার শিক্ষার্থীকে ক্লাসে সপ্তাহে ৫ দিন দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। এ বছরের আগস্ট থেকে এই স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হবে। সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুত্র মতে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি পরিচালিত হবে। প্রকল্পে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলার ৬৫৯টি এবং বান্দরবানের ৬টি উপজেলার ৪৩৬টি সহ মোট এক হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী দুপুরের খাবার পাবে। একইসাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প এবং ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদেরও দুপুরের এ খাবার দেওয়া হবে। খাবার হিসেবে থাকবে দুধ, ডিম, পাউরুটি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর মৌসুমি ফল।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে এই স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। এ কার্যক্রমের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি কাজ করবে। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদেরও এই প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। শনিবার ও রোববার যথাক্রমে ২১ ও ২২ জুন জেলার কক্সবাজার সদর ও ঈদগাঁও উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে। এরপর উখিয়া উপজেলা সহ পর্যায়ক্রমে জেলার ৯টি উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলার শতভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কোন দিন শিশুরা কী খাবার পাবে, তা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবারে প্রতিদিন একটি করে ডিম এবং ১২০ গ্রামের একটি বান (পাউরুটি) থাকবে। এ ছাড়া প্রতি সোমবার ২০০ এমএল ইউএইচটি দুধ ও একটি ১২০ গ্রামের বান (পাউরুটি) পাবে, প্রতি বুধবার ৭৫ গ্রাম বিস্কুট ও ১০০ গ্রাম সাইজের একটি কলা অথবা মৌসুমি ফল পাবে শিশুরা। প্রস্তাবিত সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকায় এনার্জি ২৫.৯ শতাংশ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ৩২.২ শতাংশ, প্রোটিন ১৬.৪ শতাংশ এবং ফ্যাট ২১.৭ শতাংশ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলা ছাড়াও দেশের অবশিষ্ট ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৃথক আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে এর অর্থ যোগান দেওয়া হবে। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ এর জন্য ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। ইতোমধ্যে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত প্রকল্প এবং ৬২টি জেলা নিয়ে গঠিত প্রকল্পের জন্য সরকার ২জন পৃথক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দিয়েছেন। দুটি প্রকল্পের কার্যক্রমই একসঙ্গে শুরু হবে। ৩৩ লাখের বেশি শিশু দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আসবে। এরমধ্যে, বিশ্বব্যাংকের অর্থে পরিচালিত প্রকল্পে কক্সবাজারের ৬৫৯টি ও বান্দরবানের ৪৩৬টি সহ মোট এক হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটিতে দেশের অবশিষ্ট ৬২টি জেলার ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিশু এ স্কুল ফিডিং কর্মসূচীর আওতায় আসবে। প্রকল্প ২টি আপাতত ৩ বছর মেয়াদের জন্য চালু করা হচ্ছে। সুত্র মতে, সরকারের রাজস্ব খাতের প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত দেশের দরিদ্র এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা আগামী আগস্ট মাস থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন দুপুরের এ খাবার পাবে।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মোঃ শাহীন মিয়া জানান, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো, অপুষ্টির ঘাটতি কমানো এবং সফলভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হতে সহায়তার লক্ষ্যে স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগস্ট মাস থেকে কক্সবাজারে প্রকল্পটি চালু করার লক্ষ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের ফান্ডে পরিচালিত হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পশ্চিম চৌফলদন্ডী হাকিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীন মুহাম্মদ জানান, স্কুল ফিডিং কর্মসূচী চালুর বিষয়ে তাঁদেরকে ২দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মসূচীটি তাঁর স্কুলে চালু করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতো তিনি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক দ্বীন মুহাম্মদ এর মতে, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হলে শিক্ষার্থীদের আরো বিদ্যালয়মুখী করা, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বাড়াতে সহায়ক হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার আবুবকর ছিদ্দিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগম বলেন, স্কুল ফিডিং কর্মসূচী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখাসহ সার্বিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। তাছাড়া, শিশুরা দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকার কারণে তারা ক্ষুধার্ত হয়ে যায়, দুপুরের স্কুল ফিডিং তাদের ক্ষুধা দূর হবে। অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। এ প্রজেক্টে হেলথের কম্পোনেন্ট রয়েছে। স্কুল ফিডিং সেটার কিছুটা হলেও রেমিডি হবে