প্রকাশিত: ২৯/১২/২০২১ ৯:১৪ এএম

কক্সবাজারে প্রশাসনের হিসেবে গত একমাসে ১৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাবের পর আরও দুটি ধর্ষণ ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের জন্ম দিলেও তা এ হিসাবে আসেনি। তবে এ দুই ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ফলে এ দুই ধর্ষণসহ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারে।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তের হাতে ধর্ষণের শিকার হন কক্সবাজারে বেড়াতে আসা এক গৃহবধূ। ১৩ ডিসেম্বর শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকা থেকে তুলে নিয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার মডেল থানায় মামলা করেন ওই কিশোরীর পিতা। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ঝিলংজার মুহুরিপাড়া এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয় তৃতীয় শ্রেণির মাদরাসাছাত্রী।

প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। অভিযোগের পক্ষপাতমূলক তদন্ত, মামলায় অনীহা, বিচারহীনতা আর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ধর্ষণ প্রবণতার মূল কারণ বলে দাবি করেছেন তারা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দ্রুত সময়ে বিচার কার্যকর করা গেলে ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে হোটেলে নারী ধর্ষণের ঘটনাকে ‘পর্যটক’ বলে ফলাও করে প্রকাশ করার পর পর্যটনশিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার ভেতরে না ঢুকে ‘পর্যটক নারী’ বলে প্রচার করায় চরমভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটনশিল্পে। অনেক পর্যটক তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন অনেকে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে পর্যটন জোনে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। একই সঙ্গে পর্যটনশিল্পে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকটি মাথায় রেখে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর একমাসে ১৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে আটটি এবং ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৬টি।

কিন্তু কাগজে-কলমে ১৮টি ধর্ষণের ঘটনা দেখা গেলেও বাস্তবে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অনেক ভুক্তভোগী বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। আবার অনেকে মামলার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে আইনের আশ্রয় নিতে চান না। ফলে তালিকার বাইরে রয়ে যায় ধর্ষণের অনেক ঘটনা।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, গেল একমাসে ধর্ষণের আলামত নিয়ে ১৯ জন হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন। সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে ধর্ষণের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করায় অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তাই সঠিক তালিকা হাসপাতালে নেই।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও নারী কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলা তদন্তে পক্ষপাতের কারণে অভিযুক্তরা শাস্তির আওতায় কম আসেন। ফলে সুযোগ পেলেই অপরাধে জড়াচ্ছেন বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলো। দেশের প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘জাগো নারী’র নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েরা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি ধাবিত হয়ে ভালো কিছু গ্রহণ না করলেও মন্দকে গ্রহণ করছে। যার প্রভাব পড়ছে তাদের চিন্তা ও চেতনায়। এজন্য পিতা-মাতার উদাসীনতাও অনেকটাই দায়ী।’

তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি নারীর প্রতি এখনও পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়নি। ফলে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। এ অবস্থায় সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

লিগ্যাল এইড কক্সবাজারের প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ও ৯(২) ধারায় ধর্ষণের শাস্তির বিধান যাবজ্জীবন। আর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদণ্ডের ২০(৩) ধারায় বিচারের জন্য মামলাপ্রাপ্তির ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সমাপ্ত করার কথা। কিন্তু বাস্তবে সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ হয় না। এছাড়া আদালতে উপযুক্ত সাক্ষী ও প্রমাণের অভাবে অনেক অপরাধী মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন।

এদিকে, হোটেলে নারী ধর্ষণের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক সভায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় সাত দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমরা অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখি। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর অনেকে জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধ করেন।

তিনি বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় সমাজের অপরাধ কমানো অসম্ভব। পরিবার ও সমাজ যদি একতাবদ্ধ হয়ে সন্তানদের সুপথে পরিচালনা না করে, তাহলে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা চলতেই থাকবে। এজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...