ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৬/০৪/২০২৩ ৮:৪০ এএম

দেশের গভীরতম সমুদ্রবন্দর কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে কয়লা নিয়ে মঙ্গলবার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে বিশালাকার একটি জাহাজ ভিড়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা এমভি অউসো মারো (OWUSU MARU) নামের জাহাজটি লম্বায় ২২৯ মিটার। জাহাজের ড্রাফট বা পানির নিচের অংশে রয়েছে সাড়ে ১২ মিটার।যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ। এত বড় জাহাজ বাংলাদেশের কোনো জেটিতে ভেড়ানোর ঘটনা এটিই প্রথম।

এর আগে বড় জাহাজ ভেড়ানোর রেকর্ড ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের হাতে। গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো হয় এমভি কমন অ্যাটলাস নামের ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীরতার একটি জাহাজ।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে এখনো চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। তবে দেশের সবচেয়ে গভীরতম কৃত্রিম নৌপথ তৈরি হয়েছে। এই নৌপথের সুবিধা নিয়ে বিশালাকার জাহাজটি ভেড়ানো হলো আজ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা কিছুটা হলেও পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।

মাতারবাড়ীতে ভেড়ানো জাহাজটি এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটিতে রয়েছে ৬৩ হাজার টন কয়লা। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই কয়লা ব্যবহার হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিটিতে জাহাজ ভেড়ানোসহ নৌপথের সব সহায়তা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক এটি। এই নৌপথে চট্টগ্রাম বন্দরের গভীর টার্মিনাল নির্মাণ হবে। এখন থেকে বড় জাহাজ ভেড়ানোর ফলে ২০২৬ সালে চালুর অপেক্ষায় থাকা গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালের জন্যও তা সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মাতারবাড়ীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) পানামার পতাকাবাহী এমভি ‘অউসো মারো’ মাতারবাড়ীতে ভিড়েছে। এটি বন্দরের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এর আগে দেশে এত বড় ও গভীরতার জাহাজ ভিড়েনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এখন সর্বোচ্চ ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ আনার সুযোগ আছে। পায়রা বন্দরেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভিড়েছে ১০ দশমিক ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ। কিন্তু ‘অউসো মারো’র মতো দীর্ঘ ও ড্রাফটের জাহাজ এটাই প্রথম।

মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি জেটি রয়েছে। কয়লাবাহী বড় জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের জন্য নির্মিত হয়েছে ৩০০ মিটার লম্বা জেটি। তেল খালাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১১০ মিটারের ছোট একটি জেটি। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর কয়লাবিদ্যুতের মালামাল নিয়ে প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভেড়ানো হয়েছে ১১২টি জাহাজ। সবই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। এবারই প্রথম কয়লা নিয়ে ভিড়েছে অউসো মারো জাহাজটি।

জাহাজটি জেটিতে ভেড়ানোর সময় আজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের এটিই প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ। এই কয়লা দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ, কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবুল হায়দার, বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতমো করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক শোজি ওয়াতানাবে প্রমুখ।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের ৯৫ শতাংশের কাজ শেষ। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আশা করছেন কর্মকর্তারা।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।

এই প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...