প্রকাশিত: ২৫/১২/২০২১ ৯:২২ এএম

‘দুঃখজনক হলো আজ পত্রিকায় আমি পড়েছি, কক্সবাজারের একটি মর্মান্তিক অপরাধ হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, সেই অপরাধের যেন সুষ্ঠু এবং দ্রুত বিচার হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।’

কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে নারীকে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন প্রাঙ্গণে শুক্রবার বাংলাদেশ আইন সমিতির ৩৫তম বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখজনক হলো আজ পত্রিকায় আমি পড়েছি, কক্সবাজারের একটি মর্মান্তিক অপরাধ হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে, সেই অপরাধের যেন সুষ্ঠু এবং দ্রুত বিচার হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।’

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে এক গৃহবধূর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত চার যুবকের মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। আটক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট হোটেলের ম্যানেজারকে।

ওই নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, স্বামী-সন্তান নিয়ে বুধবার সকালে তারা কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে ৫টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

তারপর ওই নারীকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করে। তারপর নেয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে।

সেখানে মাদক সেবনের পর সন্তান ও স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে আবার ধর্ষণ করে এক যুবক। এরপর হোটেল কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে সে চলে যায়।

ওই নারীর দাবি অনুযায়ী, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া এক যুবকের সহায়তা চান। পরে ওই যুবক এসে কক্ষের দরজা খুলে তাকে বের করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছে। প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনের ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।

তবে পুলিশ ও র‌্যাবের ছায়া তদন্তে দম্পতিটির বেশ কিছু অভিযোগের বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীকে মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম মোটরসাইকেলে তুলে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে যান বলে দাবি করেছে পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার (এসপি) জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে ভিকটিম তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। আসামি আশিক, বাবু ওনার পূর্বপরিচিত এবং স্বামী-সন্তানসহ তিনি বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ওনাকে (ওই নারীকে) যখন আশিক মোটরসাইকেলে নিয়ে যায়, মেইন রোড দিয়ে যায়। সেখানে অনেক লোকজন ছিল। তিনি বাইকের পেছনে বসা ছিলেন, কিন্তু তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি কোনো কিছু করেননি।’

৯৯৯-এ কল করেও ওই নারী সাড়া পাননি কেন জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি দাবি করেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, ‘৯৯৯-এ ফোন করে বা পুলিশকে ভিকটিম কোনো তথ্য দেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সংস্থাকে (র‍্যাব) তিনি ও তার স্বামী ফোনে তথ্য দিয়েছেন।’

খালেদার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে করা আবেদনের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আমার সঙ্গে বিএনপির ১৫ জন আইনজীবী দেখা করেছিলেন, তারা যে কথাগুলো আমাকে বলেছেন তার কোনো আইনি ভিত আছে কি না সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখেছি।’

আইনের শাসনে অগ্রগতি

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর মামলা করতে না দেয়া, খুনিদের রক্ষার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, এই সরকার ১৯৯৬ সালে ‘ইনডেমনিটি অর্ডার’ বাতিল করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করেছে। জেলহত্যা মামলার বিচার করেছে এবং ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে।

তিনি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ আমার মনে হয় না এর চেয়ে বেশি কোনোটা হতে পারে।’

বিচার বিভাগ যেন সত্যিকারের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটার ভিত শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সরকারের মতন আইনের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য কোনো সরকার কাজ করেনি।’

তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সেনসিটিভ মামলা পড়ে থাকত। এই মামলাগুলো বিচার করলে সমাজে যে একটা প্রভাব ফেলবে, সেই জিনিসটা আগে কিন্তু চিন্তা করা হতো না। এখন সেনসিটিভ হত্যা বা ধর্ষণের মামলাগুলো অত্যন্ত দ্রুত বিচার হয়। সমাজ যেন বুঝতে পারে আইনের শাসন দেশে আছে এবং বিচারের ঊর্ধ্বে নয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...