জামায়াতে ইসলামী ঘরানার কয়েকজন ওয়ায়েজীনের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় দল থেকে তাদেরকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে ওয়ায়েজীনদের নিয়ে ‘বিশিষ্ট দাঈ ও ওয়ায়েজ সম্মেলন’ আয়োজন করা হয়। সেখানে সারাদেশ থেকে শতাধীক জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে মুফতি আমির হামজা, তারেক মনোয়ারও ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা আবদুল হালিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা সাইয়েদ কামাল উদ্দিন জাফরী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও উলামা বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। সারাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও দাঈরা এতে অংশ নেন।
এসময় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহেমান ওয়ায়েজীনদের উদ্দেশে সতর্কতামূলক কিছু বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন, তাই আপনাদের বিনয়ী হতে হবে। বাহাস বা আত্মঘাতী বিতর্কে না গিয়ে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহ্বান জানাতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা দায়িত্বশীল এবং এই দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ময়দানে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না যাতে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কথাবার্তা বলতে হবে। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা যাবে না।’
জামায়াত আমির আরও বলেন, ‘জাতিকে জাগ্রত করার দায়িত্ব আপনাদের ওপরই। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে ইসলামের শাশ্বত দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহর দেওয়া বিধান ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবা করতে হবে— এই শিক্ষা ইসলাম দেয়।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে বিভাজিত করার পক্ষে নই। আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মুসলমান। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জাতি যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সমাজ পরিচালনায় ভূমিকা রাখে, তাহলে দেশ কল্যাণের পথে এগিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা মসজিদে নামাজে নেতৃত্ব দেন, তাদের সমাজের ভালো কাজেও নেতৃত্ব দিতে হবে। যখন ওলামায়ে কেরাম জাতির নেতৃত্বে আসবেন, তখনই একটি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ।’
ইসলামী শক্তির ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসলামী দল ও শক্তির ঐক্য দেশবাসীর কাম্য। বিভেদ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এমন কোনো বক্তব্য থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। ঐক্য বিনষ্ট না করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী মুফতী আমির হামজা ও জামায়াত ঘরানার বক্তা হিসেবে পরিচিত তারেক মনোয়ারের বেশ বিছু বক্তব্য নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়।
সে সময় তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ইসলাম বিতর্ক আদও পছন্দ করে না। ময়দানে বিশৃঙ্খলা হয় এমন বক্তব্য দেওয়া আদও ঠিক নয়।’
খলিলুর রহমান মাদানী আরও বলেন, ‘তিনি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা মোটেও কাম্য নয়। এসব বিষয়ে আমরা তাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এর আগে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। বিষয়টা সাংগঠনিকভাবে দেখা হচ্ছে।