ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৮/০৫/২০২৩ ৭:৪৯ এএম

যে এমএলএম ব্যবসায় দুই দশক আগে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ, হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল ডেসটিনি-ইউনিপেটুইউ-এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান, সেই ব্যবসায় এবার জড়াল একটি পুলিশ চক্র। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) এমন এক ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছেন মনতোষ চন্দ্র দাশ নামে একজন কনস্টেবল।

বরখাস্তের আগে মনতোষ খুলশী থানার পাহাড়তলী ফাঁড়িতে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে উজ্জ্বল দাশ গুপ্ত নামে এক ব্যক্তি গত ৪ মে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগ তদন্তে গিয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যতদূর জেনেছি, মনতোষ অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, আবার অনেককে ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু এখন যিনি (উজ্জ্বল) অভিযোগ করেছেন তিনি টাকা ফেরত পাননি।’

উজ্জ্বলের অভিযোগ, চার মাস আগে কনস্টেবল মনতোষ চন্দ্র দাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মনতোষ তাকে বলেন, পিএলসিইউএক্স ডটকম নামে একটা অনলাইন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা আছে। সেখানে মনতোষ একজন গ্রাহক। সেখানে ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ৬ লাখ চার হাজার টাকা মুনাফা পাওয়া যায়। উজ্জ্বল প্রলুব্ধ হয়ে মনতোষকে নগদ ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন বলে অভিযোগ।

মনতোষের বরাতে উজ্জ্বল বলছেন, অনলাইনে এমএলএম ব্যবসায় মনতোষের আট হাজার গ্রাহক আছে। এর মধ্যে ২০০ জন পুলিশ সদস্য আর ১৫০ জন সাংবাদিকও আছেন। অন্যরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এই ব্যবসায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে বলে উজ্জ্বলের কাছে দাবি করেছেন মনতোষ।

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিনিয়োগ করার পর ৪ মে পর্যন্ত উজ্জ্ব এক টাকাও মুনাফা পাননি বলে জানান। এ কারণে ক্ষিপ্ত তিনি থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি তদন্তের জন্য পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক খাজা এনাম এলাহীকে নির্দেশ দেন ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা। তদন্তের পর খাজা এনাম এলাহী একটি প্রতিবেদন দেন ওসিকে। সেই প্রতিবেদন পেয়ে ওসি আরেকটি প্রতিবেদন দেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমানকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উজ্জ্বল দাশগুপ্তের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এই ডায়েরিটি তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনতোষ পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, ‘তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করে অনলাইনভিত্তিক এমএলএম ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন।’ কনস্টেবল মনতোষের কাছ থেকে এমন বক্তব্য পাওয়ার পর প্রতিবেদনে লেখা হয়, মনতোষ চন্দ্র দাশ যেকোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পিএলসিইউএক্স ডটকমে ঠিকানা হিসেবে জর্জিয়ার কুটাইসি শহরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সঠিক কিনা, এটা আদৌ কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠান কিনা, এর মালিক-পরিচালক কে বা কারা, কনস্টেবল মনতোষ এর সঙ্গে কিভাবে জড়িত সে বিষয়ে পুলিশ এখনও কিছু বলতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষেই ২০০ পুলিশ সদস্য আর ১৫০ জন এখানে বিনিয়োগ করেছেন কিনা তাও পুলিশ এখনও বলতে পারেনি। এসব তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে এমএলএম ব্যবসার টাকা দেশে আছে নাকি পাচার হয়েছে, সেটাও এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মনতোষ একাধিক সহকর্মীকে জড়িয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উপ-পরিদর্শক ও কনস্টেবলের সংখ্যা বেশি। একজন কনস্টেবল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘মনতোষ সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর বিনিয়োগকারী পুলিশ সদস্যদের মাথায় বজ্রাঘাত হয়েছে। এখন তারা মুষড়ে পড়েছেন। কিন্তু সরাসরি অভিযোগ করতে পারছেন না তারা।’ কয়েকজন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও কনস্টেবলের নাম পাওয়া গেছে। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের আগে এসব নাম প্রকাশ করা সমীচিন হবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, ‘মনতোষ পুলিশ সদস্যদের এই ব্যবসায় জড়িয়েছেন এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কিন্তু জড়িত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা এবং তাদের বিনিয়োগ সম্পর্কে এখনই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। অনুসন্ধান চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই একটি চিত্র পাওয়া যাবে।’ অন্য একজন কনস্টেবল বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ চেয়েছিল। আমি দিইনি। দিলে পুরো টাকা মার যেত।’

এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মনতোষ চন্দ্র দাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’ এটুকু বলেই তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কল করা হলেও তিনি আর সাড়া দেননি। ইতোপূর্বে ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পরিচালক পদে থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। পরে তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন।

অনলাইনে এমএলএম ব্যবসায় যুক্ত হয়ে গ্রাহকরা বিনিয়োগ হারাচ্ছেন এমন উদাহরণ দেশে ভূরি ভূরি আছে। সর্বশেষ গত বছর জুলাই দেশে অনলাইনে এমএলএম ব্যবসায় জড়িত ছয় প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। থলে ডটকম, গ্লিটারস আরএসটি ওয়ার্ল্ড, অ্যানেক্স ওয়াল্ডওয়াইড লিমিটেড, এক্সলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুট অ্যান্ড কনজিউমার লিমিটেড, আলিফ ওয়ার্ল্ড এবং গ্রিন বাংলা ই-কমার্স লিমিটেড বন্ধের ঘোষণার পর মন্ত্রণালয়ের তরফে গ্রাহকদের সতর্ক করা হয়েছিল। সুত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...