সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া নিউজ ডটকম::
অরক্ষিত বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্টি,একের পর এক হত্যাকান্ড ও সেই সাথে বেড়েছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির ঘটনা। ভয়ংকর হয়ে উঠছে উখিয়া উপজেলার মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে গড়া কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি দুটি। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের মাঝে বিরাজ করতে শংকা ও আতংক। কারন গত ১ মাসের ব্যবধানে ২ জন রোহিঙ্গা নেতা সহ ৩ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ পূর্বক খুন করেছে আল ইয়াকিন নামের একটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র জংগী সন্ত্রাসী সংগঠন। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করলেও স্থানীয়দের মাঝে তৈরী হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। অনেকেই মাগরিবের পর ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। সর্বত্র একরকম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
জানা যায়,মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা প্রসাশনের নিযন্ত্রনে না থাকায় বিভিন্ন সময় ক্যাম্প সহ কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গাদের অপ-তৎপরতা সব সময় ছিল। কিন্ত বর্তমানে তা অত্যাধিক হারে বেড়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সুত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প দুটিতে মিয়ানমারের সশস্ত্র জংগী সংগঠন আল ইয়াকিনের প্রবেশ ঘঠেছে। তারা একের পর এক অপহরন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্যাম্প এলাকায় আতংক ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা গত ১৩ জুন কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের হানা দিয়ে ই-১ ব্লক নেতা মোঃ আয়ুব মাঝি ও কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের শরণার্থী আলী আহমদের ছেলে মোঃ সেলিম (২৬) কে তাদের ঘর লুটপাট করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে গত ১৮ জুন দুপুরে বালুখালী তেলীপাড়া খাল থেকে ভাসমান হাত পা বাঁধা ও গলা কাটা অবস্থায় মোঃ সেলিম ও গত ২৫ জুন রাত ৮ টার দিকে অপহৃত রোহিঙ্গা মোঃ আয়ুব মাঝি লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। ইতিপূর্বেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ মে কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের মালয়েশিয়া ফেরত মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে মোঃ শফি প্রকাশ বলি (২৬) কে আল ইয়াকিন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে শিবির থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের ৩ দিনের মাথায় ২৫ মে সকালে পার্শ্ববর্তী মধুরছড়া জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গা মোঃ শফির প্রকাশ বলির লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। সর্বশেষ কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিককে পিঠে চুরিকাঘার করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনা নিয়ে দু,টি ক্যাম্প সহ আশেপাশের এলাকায় তৈরী হয় অস্থিরতা। পাশাপাশি দেখা দিয়ে নানান শঙ্কা। ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এসব হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগন মাগরিবের পর ঘর থকে খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেনা । এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে, আল ইয়াকিন গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সন্ধ্যার পর মুখে কালো কাপড় বেধে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ঘুরোঘুরি করে। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর সহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতা জানান, কুতুপালং শিবির ও বালুখালী বস্তির রোহিঙ্গা কলিম উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, ইসমাইল কুতুপালং বস্তির সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা মোঃ জাবের (৩২), মোঃ নুর (২৮), মনির আহামদ (২৮), খুইল্যা মিয়া মুন্না (৩২), সলিম (২৬), (২৮) ও বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তির মোঃ কালু (৩৫) ও মো ইসলাম (৩৩) এর নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আল ইয়াকিন নামের সশস্ত্র গ্রুপটি। তারা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে অপরণ পূর্বক চাঁদা দাবী,খুন, গুমসহ বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি ৩টি হত্যাকান্ড ঘঠিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তিতে।কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, ঈদের পরের দিন কোন কারণ ছাড়া উক্ত সন্ত্রাসীরা আমাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে। আমার চিৎকারে অন্যান্য রোহিঙ্গারা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। আমি কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বস্তিতে ফিরেছি। একের পর এক অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটায় আমরা যারা সরকারের আইন কানুন মেনে এখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ বলেন, কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা শিবিরে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে দেশী, বিদেশী অনেক অখ্যাত,বিতর্কিত লোক অবাধ বিচরণ করে যাচ্ছে। আমি সহ স্থানীয়রাও একপ্রকার নিরাপত্তাহীন দিনাদিনাত করছে। তারা আমাকেও বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে উক্ত সন্ত্রাসীরা। আমি এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী লিপিবদ্ধ করেছি। দ্রুত এদের গ্রেফতার করা না হলে আরো বড় ধরনের দুঘর্টনা সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে উথিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হরে তিনি বলেন,কুতুপালং ক্যাম্পে হত্যাকান্ডের ঘটনায় দু,জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রসাশন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে।
পাঠকের মতামত