দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া চলছে, সেটির সঙ্গে একমত নয় এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)।
দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের যে প্রক্রিয়া চলছে, সেটির সঙ্গে একমত নয় এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। এ দুটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন তারা। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথম চারটি ব্যাংকেরই নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের হাতে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর এ ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএল উদ্যোক্তাদের ভাষ্য হলো, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের তুলনায় তাদের অবস্থা বেশ ভালো। তারল্য পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণের হার ও মূলধন কাঠামোর দিক থেকেও এ দুটি ব্যাংক শক্তিশালী। দুটি ব্যাংকেরই বৈদেশিক বাণিজ্যের (আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স) আকার অনেক বড়। এক্সিম ও এসআইবিএলকে এস আলম গ্রুপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়া যৌক্তিক নয়।
পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেও একই ধরনের তথ্য মিলছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে এ পাঁচ ব্যাংকের মোট বৈদেশিক বাণিজ্য (আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স) ছিল ৯৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে একাই ৫০ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে এক্সিম ব্যাংক। সে হিসাবে পাঁচ ব্যাংকের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশই এ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। গত বছর এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার রফতানি ও ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখানে একই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল মাত্র ৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। আর গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক গত বছর যথাক্রমে মাত্র ১ হাজার ২৩১ কোটি ও ১ হাজার ১০২ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পেরেছে। তবে একই সময়ে এসআইবিএলের বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ শরিয়াহভিত্তিক এ পাঁচ ব্যাংকের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই করেছে এক্সিম ও এসআইবিএল। বাকি ১০ শতাংশ ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে।
বৈদেশিক বাণিজ্যের এ ধারাবাহিকতা চলতি বছরও অব্যাহত আছে। গত মে পর্যন্ত চলতি বছর ১৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করেছে এক্সিম ব্যাংক। একই সময়ে এসআইবিএলের বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে মে পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ৮০২ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ৬৫৮ কোটি ও ইউনিয়ন ব্যাংক ১৪৩ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পেরেছে।
01
পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অডিট ফার্ম দিয়ে শরিয়াহভিত্তিক এ পাঁচ ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং’ ও ‘কেপিএমজি’র করা এ নিরীক্ষা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। একিউআর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক এ পাঁচ ব্যাংকে জমা থাকা আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আর ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণ (বিনিয়োগ) স্থিতি ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকাই খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৭৬ দশমিক ৬৯ শতাংশই খেলাপি। এ পাঁচ ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা বলে নিরীক্ষায় উঠে এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে খেলাপির হারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইউনিয়ন ব্যাংকের। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৯৭ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ৯৬ দশমিক ৩৭ ও গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণও খেলাপিযোগ্য বলে একিউআর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ ও এসআইবিএলের ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ খেলাপি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজেদের নিরীক্ষায় তাদের খেলাপি ঋণের হার ২৮ শতাংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপনের দাবি, বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ, খেলাপি ঋণ কিংবা আর্থিক সক্ষমতার বিচারে এক্সিম ব্যাংকের ধারেকাছেও ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নেই। এ তিন ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিমের একীভূতকরণের আলোচনাও যৌক্তিক নয়। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নানা সংকট সত্ত্বেও চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত আমরা ১৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করেছি। একই সময়ে ওই তিনটি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে ১ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যও করতে পারেনি। আমাদের হিসাবে এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৮ শতাংশ। যেখানে এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট ওই তিন ব্যাংকের খেলাপির হার ৯০ শতাংশের বেশি। এ পরিস্থিতিতে এসব ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণ কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। ওই তিন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের যে সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে, আমরা সেটির তীব্র বিরোধী।’
নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘পর্ষদ পুনর্গঠনের পর গত মে মাস পর্যন্ত আমরা আমানতকারীদের প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার আমানত নতুন করে সংগ্রহ করা হয়েছে। নেতিবাচক নানা সংবাদ ও একীভূতকরণের প্রচারে গ্রাহকরা এখনো আমানত তুলে নিতে চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি একবার বলে এক্সিম ব্যাংকের পরিস্থিতি “ভালো”, এটি একীভূত হবে না, তাহলে প্রতি মাসে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করতে পারব।’
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর দেশের ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেন। পর্ষদ পুনর্গঠনের পর থেকেই গভর্নর বলে আসছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তর করা হবে। আর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে থাকবে। এ দুটি ব্যাংক নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে ঈদুল আজহার ছুটির আগে ৪ জুন শরিয়াহভিত্তিক এ পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিয়ে বৈঠকে বসেন গভর্নর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ব্যাংক পাঁচটির সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি একীভূত হওয়ার রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়।
ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার প্রথম দিনই ১৫ জুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ব্যাংকগুলো একীভূত হয়ে একটি ব্যাংক হলেও কোনো কর্মী চাকরি হারাবেন না। এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে ব্যাংক মার্জারের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব, পরবর্তী সরকার এসে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মার্জার করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে প্রয়োজনে শাখাগুলো স্থানান্তর করা হবে।’
আমানতকারীদের স্বার্থে ব্যাংক একীভূতকরণের কথা বলে গভর্নর গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বহুবার আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আমানতকারীরা আস্থা না রেখে বরং এসব ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিতে ভিড় করছেন। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার দেয়া হলেও ব্যাংকগুলোর সংকট কাটছে না। বিরাজমান পরিস্থিতির বিষয়ে এসআইবিএলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের অবস্থা হয়েছে তেল মাখানো বাঁশে বানরের বেয়ে ওঠার অংকের মতো। যখনই আমরা কিছু আমানত সংগ্রহ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে “একীভূতকরণ” কিংবা “দুর্বল ব্যাংক” বলে বক্তব্য আসে। এর প্রভাবে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করা হয়, তার চেয়ে বেশি বের হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, একীভূতকরণ হবে আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে। কিন্তু গ্রাহকরা সেটি শুনছেন না। তারা আমানত তুলে নিতে আসছেন। এভাবে ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে হবে।’
একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানান এসআইবিএলের পরিচালক ডা. মো. রেজাউল হক। ব্যাংকটির পাঁচ সদস্যের পর্ষদে তিনিই একমাত্র উদ্যোক্তা পরিচালক। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময় এসআইবিএলের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এ উদ্যোক্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০১৭ সালে আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে এসআইবিএল দখল করা হয়েছিল। এরপর ব্যাংকটিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। তার পরও এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় এসআইবিএলের অবস্থা এখনো ভালো। এক্সিম ছাড়া যে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এসআইবিএলকে একীভূতকরণের কথা হচ্ছে, সেগুলো খুবই দুর্বল। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে ভাবছি। পাশাপাশি পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী মাসের মধ্যেই শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। এ ব্যাংকের জন্য মূলধন জোগান দেবে সরকার। নতুন ব্যাংকটির অধীনে পাঁচটি ব্যাংকের আমানত ও সম্পদ স্থানান্তর করা হবে। পরে ব্যাংকটির মালিকানায় দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের যুক্ত করা হবে। সারা দেশে এ পাঁচ ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৭৭৯টি। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শাখা ২২৬, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০, এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১০৪টি শাখা রয়েছে। এছাড়া এসব ব্যাংকের ৬৯৮ উপশাখা, ৫০০ এজেন্ট ও এক হাজার এটিএম বুথ রয়েছে। পাঁচ ব্যাংকে জনবল রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘আমরা আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই ব্যাংকগুলোর একিউআর প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর গভর্নর মহোদয় বৈঠক ডাকবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। তার পরই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।’
নূরুল আমিন আরো বলেন, ‘গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এক্সিম ব্যাংক চেয়ারম্যান একীভূত হওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, এক্সিম ব্যাংক নিজে নিজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, তাদের কাছে ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্র আছে। এক্সিমের দাবি ও বাস্তবতা যদি মেলে তবেই হয়তো ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
একীভূতকরণের যেকোনো সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংক পাঁচ ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায় না বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এসআইবিএলও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করছে বলে জেনেছি। এ দুই ব্যাংকের আপত্তি যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি বিবেচনায় নেবে।’
আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। সেটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও তাই। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই ব্যাংক খাতের সংস্কার দরকার। তবে কোনো সংস্কার যাতে ভবিষ্যতে প্রশ্নের মুখে না পড়ে, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।’