প্রকাশিত: ০৪/০১/২০২২ ৯:৫০ পিএম

সরওয়ার আলম শাহীন :
কোনো প্রকার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী বেপরোয়া চক্র উখিয়া উপজেলার সর্বত্র পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে। এতে করে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। কেউ কেউ পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসতঘর বানাচ্ছেন। আবার কেউ সড়ক তৈরীর অজুহাতে পাহাড় কাটছেন। পাহাড় কাটারোধে প্রশাসন হঠাৎ করে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু কিছুতেই থামছেনা পাহাড় কাটা।

জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিনমারা সড়কের দু,পাশে দুই/তিন কিলোমিটার জুড়ে চলছে অবাধে পাহাড় কাটা। এমন কোন পাহাড় নেই, যা কাটা হচ্ছে না। প্রতি বছর শুকনো মৌসুম এলেই নির্বিচারে চলে পাহাড়কাটা। আর বর্ষা মৌসুমে ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। প্রতিদিন ওই এলাকা থেকে প্রায় ২০টি ডাম্বার (ট্রাক) পরিবহন করছে পাহাড়কাটা মাটি। এভাবে পাহাড়কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন। একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রভাবশালীরা চালাচ্ছে এই নিধনযজ্ঞ।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক জানান, এখানে পাহাড় কাটছে একটি প্রভাবশালী চক্র। তারা স্থানীয় হেডম্যান, ভিলেজার ও বিট কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে পাহাড় কাটছে। বলা যায়,তারা হেডম্যান, ভিলেজার ও বিট কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে পাহাড়গুলো কিনে নিচ্ছে। কর্মকর্তারা পাহাড় গুলো বিক্রি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান,স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেতৃত্বেই চলে এই পাহাড়কাটা। তারা স্থানীয় বিট কর্মকর্তা,ভিলেজার ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করে চালায় এ অপরাধকর্ম। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে চান না।
এ বিষয়ে আব্দুল হক আরো জানান, যারা মাটির ঠিকা রাখে, তারাই প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহন করছে। তাদের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় ট্রাক নিয়ে প্রবেশ করতে না দিলে অথবা ট্রাকগুলো আটকে মামলা দিলে পাহাড়কাটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা কোনো ভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। পাহাড়কাটা বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধস হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, আমরা প্রতিদিনই উখিয়া উপজেলার কোনো না কোনো স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি। হরিণমারা এলাকায় আমরা সম্প্রতি খুঠি স্থাপন করে দিয়েছি যাতে পাহাড়ের মাটি আনা-নেওয়া করা না যায়।
তিনি আরো বলেন বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা পাহাড় কেটে ডাম্পার করে সন্ধ্যা থেকে রাতের বেলায় মাঠি পাচার করে। আমরা কখন অভিযান পরিচালনা করি তারা উৎপেতে থাকে। তাই অনেক সময় প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না।

পাঠকের মতামত