মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য ইউনিয়নের ধামনখালী এলাকায় প্রকাশ্যে উঁচু পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। পাহাড় কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
পাহাড় কাটার পাশাপাশি ওই এলাকার অন্তত তিন হাজার আম, পেয়ারা ও কলাগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন পাহাড় কেটে বানানো সমতল জমিতে তৈরি হচ্ছে ৪০টির বেশি পাকা ঘর। এ কর্মকাণ্ডে নেতৃত্বে দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫০-৬০ ফুট উঁচু বিশাল একটি সরকারি পাহাড় কেটে সমতল ভূমি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় স্থানীয় কয়েকজন মানুষ আম, পেয়ারা ও কলার বাগান করতেন। এখন সে জায়গাতেই ইটের গাঁথুনি তোলা হচ্ছে। আবার পাহাড় কাটা মাটি ফেলে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার ও পাশের থাইংখালী খালও ভরাট করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অনেকের দাবি। পাহাড়টি বন বিভাগের মালিকানাধীন। তবে বন বিভাগ এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় আছে। আবার অনেকে বলছেন, পাহাড়টি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। তবে ওই পাহাড় সরকারি খাসজমি কিংবা বন বিভাগের মালিকানাধীন, যেটাই হোক না কেন, এভাবে পাহাড় কেটে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই বিরোধিতা করেছেন।
হাজার হাজার একরের সরকারি পাহাড় কেটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়শিবির করা গেলে স্থানীয় গরিব লোকজনের জন্য কেন আশ্রয়ণ প্রকল্প করা যাবে না।
এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা
স্থানীয় পালংখালীর আইনজীবী আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটা মাটি ফেলে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি বাজার ভরাট করা হয়েছে। বাজারের পাশের পানি চলাচলের একমাত্র পালংখালী খালটিও ভরাট করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড় কেটে বিতর্কিত জমিতে বঙ্গবন্ধুর নামে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করা হলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল এহসান প্রথম আলোকে বলেন, দিনদুপুরে বুলডোজার, এক্সকাভেটর দিয়ে বিশাল একটি পাহাড় মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন নজির কোথাও নেই বলে তিনি দাবি করেন।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু যাঁরা নিয়মবহির্ভূত কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত এ প্রকল্পের দুর্নাম রটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অসাধু চক্র এ ধরনের কাজ করতে পারে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কেটে যেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা বন বিভাগের পাহাড় নয়। এটা সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি পাহাড় কাটতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি লাগে। কিন্তু পালংখালীতে পাহাড় কেটে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের বিপরীতে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেননি।
মাহবুবুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি গতকাল দুপুরে সরেজমিনে স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। বিশাল পাহাড় কেটে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। সেটাও আবার জাতির জনকের নামে। আবার পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিজের বাজার ও বাজারের পাশে একটি খালও ভরাট করছেন। চেয়ারম্যান পাহাড় কাটা মাটি বিক্রি করেছেন, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, হাজার হাজার একরের সরকারি পাহাড় কেটে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়শিবির করা গেলে স্থানীয় গরিব লোকজনের জন্য কেন আশ্রয়ণ প্রকল্প করা যাবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরেজমিনে এসে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য সরকারি পাহাড়টি চিহ্নিত করে দিয়েছেন।
এ ছাড়া পাহাড়ের মাটি দিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার ও সরকারি খাল ভরাটের অভিযোগটি অস্বীকার করেন এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
ইউএনও নজিম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পালংখালীর খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড় কেটে সেই আশ্রয়ণ প্রকল্প হচ্ছে কি না, সেটা তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান। সুত্র: প্রথম আলো