সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
পাশ্ববর্তী দোকান থেকে জাবুকে পেয়াঁজ-রসুন আনতে পাঠিয়েছেন মা। ছেলেকে মাংস রান্না করে খাওয়াবেন বলে। পেয়াঁজ রসুনের পরিবর্তে মা পেয়েছেন জলজ্যান্ত ছেলের লাশ। এখনো সেই মাংস রেখে দিয়েছেন তিনি,রান্না করেননি। ছেলের কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা। চোঁখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আকাশছোঁয়া কান্না। এই অশ্রু বেদনার, এ অশ্রু নাড়ি ছেঁড়া ধন হারানোর। জাবুর বাড়ী গিয়ে এ প্রতিবেদক যখন কথা বলছিলেন,তখন মায়ের দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিল জাবুর আরো দু,ভাই। এরপরও আদরের ছেলে জাবুকে খোঁজে বেড়াচ্ছেন মা। বাবা হারা ছেলেকে আকঁড়ে রেখেছিলেন তিনি এতোদিন, আমার ছেলে কী আর ফিরে আসবে না? এ প্রতিবেদকের কাছে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে জাবুর মা সাজেদা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মায়ের কান্না যেন থামতে চাইছিল না।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, গত ৭ মে রাত ৮ টায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বটতলী ষ্টেশনের পশ্চিম পাশে সৈয়দ নুরের দোকানে প্রতিপক্ষ শাহরিয়ার শাকিলের নেতৃতে সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান জাবু নিহত হয়। এ ঘটনায় জাবুর বড় ভাই লৎফুর রহমান ১২ জনকে আসামী করে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করে। পূর্ব ফারির বিল গ্রামের নিহত মুজিবুর রহমান জাবু ও হত্যাকারী ছগির আহমদের ছেলে শাহরিয়ার শাকিলের মধ্যে চিংড়ি বিক্রির টাকা লেনদেনের সূত্র ধরে বিরোধের সৃষ্টি হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কায় কিসলু। ছাত্রলীগ নেতা খুনের ঘটনায় পালংখালী এলাকার জনগণের মধ্যে এখনো চাপা আতংক বিরাজ করছে, মামলার আসামীরা এখনো অধরাই থেকে গেছে। যদিও ওসি বলছেন, আসামীরা স্থান পরিবর্তন করছে। ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন জুয়েল জানান, গেল ইউপি নির্বাচনে জাফর মেম্বার পরাজয় বরণ করেন সোলতান মেম্বারের কাছে। এর পর থেকে জাফর মেম্বার সোলতান মেম্বারকে এমনকি তার আতœীয় স্বজনকেও সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া পালংখালীতে প্যারা সংক্রান্ত ব্যাপারেও দুইটি গ্রুপ সত্রিুয় রয়েছে। এতে একটিতে আছেন সোহেল মোস্তফা গ্রুপ ও অন্যটিতে লতিফ আনোয়ার চৌধুরী গ্রুপ। তাছাড়া এখানে আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দল ও ব্যর্থতার কারণে দলেও গ্রুপিং রয়েছে। নিহত জাবু ও তার হত্যাকারীরা আমার আতœীয়। জাবুদের ৯ জনের ১টি গ্রুপ ছিল। তাদের চিংড়ি প্রজেক্টের টাকা বেশির ভাগ নিহত জাবু ভেঙ্গে দিয়েছিল। এই টাকার কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সুযোগ সন্ধানী একটি পক্ষ উস্কানি দিয়ে এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। ৯ নং ওয়ার্ডের সোলতান মেম্বার বলেন, আলী আহমদ ও জাফরুল ইসলাম বাবুল যুব সমাজের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাদের ইন্দনে জাবুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাকে গাড়ী চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিল। আমাকে না পেরে আমার পরিবারের মেধাবী ছাত্র মুজিবুর রহমান জাবুকে সু-পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহত জাবুর দাদা হাজী আবুল হোসেন বলেন, আমার নাতিকে যারা হত্যা করেছে তারা চিহ্নিত। জাবুর চাচা শামসুল আলম ও নুরুল ইসলাম বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জাবুকে হত্যা করা হয়েছে। জাবুর ছোট ভাই কামরুল হাসান ও ওমর ফারুক বলেন, ভায়ের কথা বললে মা পাগলের মতো হয়ে যান। এখনো মা তার ছেলের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। আমরা আমার ভায়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলি আহমদ বলেন, ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। ঘটনাটি মর্মান্তিক এবং দুঃখ জনক। এর আগেও প্যারাকে কেন্দ্র করে জুয়েলের ভ্রাতৃúুত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানেও আমাকে জড়ানোর অপচেষ্টা হযেছিল। এবারে ও আমাকে নিয়ে যারা কথা বলছেন তারাই ইন্দনদাতা। এ ঘটনায় জুয়েল জড়িত। প্যারা দখলদারদের মধ্যে আমার চৌদ্দ গোষ্টি জড়িত নাই। প্রকৃতপক্ষে যারাই অবৈধ প্যারার দখলদার তারাই এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। এদিকে এ ঘটনায় একপক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার অপচেষ্টার ফলে প্রকৃত ঘটনাটি আড়ালে চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এতে প্রকৃত আসামীরা পার পেয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সচেতন মহলের মতে,এ হত্যাকান্ডটি ঘামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি প্রভাবশালী মহল,তাই এখনো কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সু-পরিকল্পিত এবং পূর্ব শত্রতার জের ধরে। ঘটনার পর রাজনৈতিক কিছু নেতা ফাইদা হাসিলের জন্য ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেছেন, আসামীরা স্থান পরিবর্তন করছে বারবার। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।