গত বছরের আলোচিত জুলাই আন্দোলনের পর সারাদেশের মতো উখিয়া থানার দেয়ালেও চোখে পড়ার মতো নানা নীতিবাক্য লেখা হয়েছিল— “পুলিশ জনগণের বন্ধু”, “সেবায় পুলিশের ধর্ম”। এ যেন এক নবজাগরণের বার্তা। সেসময় এক ছাত্র দেয়ালে লিখতে গিয়ে বলেছিল, “আমি বিশ্বাস করি, একদিন আমাদের উখিয়া থানায় ঘুষ ছাড়া মামলা হবে, নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হবে না। থানায় বিচার হবে সঠিকভাবে, পুলিশ হবে জনগণের ভরসার প্রতীক।”
কিন্তু বাস্তবতা কি আদৌ বদলেছে? প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উখিয়া থানায় গেলে অভিযোগ দায়েরের আগেই শোনা যায় দালালদের নাম। বলা হয়— ভেতরে কথা বলার আগে কিছু দিতে হবে। কেউ অভিযোগ জানাতে এলে দালালরা কাজ করে দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নিচ্ছে। বাদী-বিবাদীকে থানায় ডাকা হলে, সেখানেও দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি চোখে পড়ে। অভিযোগ আছে, এসব দালালদের মাধ্যমে এক পক্ষ সুবিধা আদায় করে নেয়, আর পুলিশও সেদিকে ঝুঁকে যায়। এতে করে সঠিক বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সোহেল ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, থানায় অভিযোগ দিতে গেলে দালালরা ঘিরে ধরে। তাদের মাধ্যমে কথা বললেই যেন কাজ সহজ হয়, আর সরাসরি গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এতে সাধারণ মানুষ বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

এই বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফ হোসাইনের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে কক্সবাজার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জসিম উদ্দিন জানান, কারা দালাল এবং কোন অফিসারদের সঙ্গে তারা যুক্ত— সুনির্দিষ্ট করে জানালে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দেন। উখিয়ার মানুষ এখন প্রশ্ন করছেন— শহীদদের রক্তে রঞ্জিত যে জুলাইয়ের চেতনা, তা কি দেয়ালের লেখায় থেমে গেল? নাকি আসলেই একদিন উখিয়া থানায় গিয়ে সাধারণ মানুষ বলবে, “হ্যাঁ, পুলিশ এখন সত্যিই জনগণের বন্ধু”?
সময় এসেছে শুধু দেয়ালে নয়, চরিত্রেও লিখে দেওয়ার— “আমি জনগণের পুলিশ।”