উখিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্টেশনগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে চরম অব্যবস্থাপনা ও সড়ক নৈরাজ্য। কোর্টবাজার, উখিয়া সদর, মরিচ্যা, কুতুপালং, থাইংখালী ও বালুখালী বাজার এলাকায় প্রতিদিনই লেগে থাকে তীব্র যানজট। কোথাও কার্যকর রোড ডিভাইডার নেই, কোথাও ফুটপাত দখল করে বসেছে ভাসমান দোকান ও অবৈধ পার্কিং। এতে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে কোর্টবাজার ও কুতুপালং স্টেশন এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। গেল দুই বছর আগে এসব এলাকায় কিছু রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছিল। তখন যানজটের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং পথচারীরাও ফুটপাত ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব ডিভাইডার এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া ডিভাইডারগুলো পড়ে আছে অন্যত্র পরিত্যক্ত অবস্থায়।

এদিকে ফুটপাতজুড়ে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকানপাট। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু ইজারাদার ও মার্কেট মালিক এসব দোকানদারদের কাছ থেকে দৈনিক বা মাসিক হারে ভাড়া আদায় করছে। ফলে একপ্রকার ‘অব্যবস্থাপনার বাজার’ গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, বাজার এলাকায় নির্ধারিত পার্কিং স্পট না থাকায় চালকেরা রাস্তার উভয় পাশে ইচ্ছেমতো গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছে। এতে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে মূল সড়কে চলতে হচ্ছে, যা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বাবুল বলেন, পুরো উখিয়ার স্টেশনগুলোই একই সমস্যায় ভুগছে। রোড ডিভাইডার নষ্ট, ফুটপাত দখল আর অবৈধ পার্কিং, এই তিন সমস্যা সমাধান না হলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

উখিয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, লোকবলের ঘাটতির কারণে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক কন্ট্রোল কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে। পরিকল্পিত ও টেকসই রোড ডিভাইডার স্থাপন করলে যানজট অনেকটাই লাঘব হবে এবং পথচারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত হবে। তবে ফুটপাত দখল, অবৈধ পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

শাহপুরী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাইওয়ে পুলিশেরও লোকবল সীমিত। তারপরও উখিয়ার বিভিন্ন স্টেশনে যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

সচেতন নাগরিক ও ব্যবসায়ী মহলের মতে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পরিকল্পিত ও টেকসই রোড ডিভাইডার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণ ও নির্দিষ্ট পার্কিং স্পট নির্ধারণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ট্রাফিক বিভাগে জনবল বৃদ্ধি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, এবং অবৈধ ভাড়ার উৎস চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।