২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং গ্রামজুড়ে নেমে আসে এক বিভীষিকাময় রাত।
রোকেন বড়ুয়ার ঘরে তার মা সখি বালা বড়ুয়া (৬৫), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাইজি সনি বড়ুয়া (৬)-কে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুই শিশু স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। সেই নৃশংস ঘটনার পর ছয় বছর কেটে গেলেও আজও রহস্যের জট খুলেনি।
ঘটনার পরদিন নিহত মিলা বড়ুয়ার পিতা শশাংক বড়ুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা করেন (জিআর ৪৭৮/২০১৯)। কিন্তু সুনির্দিষ্ট আসামি না থাকায় মামলার অগ্রগতি শুরু থেকেই ধীরগতির। সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনকে আটক করা হলেও তারা জামিনে মুক্ত হন। আর মামলার তদন্তের হাল এখনো আলোর মুখ দেখেনি।বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।
স্বজন হারানো রোকেন বড়ুয়ার বুকভাঙা আহাজারি আজও থামেনি। নতুন সংসার শুরু করলেও মা-স্ত্রী-সন্তান আর ভাইজির করুণ মৃত্যুর স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে প্রতিনিয়ত। তার দাবি, “অপরাধীদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া না হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।”
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির নেতা রবিন্দ্র বিজয় বড়ুয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজনকে হত্যা করে ছয় বছরেও বিচার না হওয়া জাতির জন্য অমঙ্গল ছাড়া কিছু নয়। বিচারহীনতা কেবল অপরাধীদের উৎসাহিত করে।”
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মধ্যে তদন্তের খোঁজখবর নিলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। প্রশ্ন উঠছে—এই তদন্তের গতি ধীর কেন? প্রমাণ সংগ্রহে দুর্বলতা, নাকি অন্য কোনো অজানা কারণে মামলাটি ঝুলে আছে?
এই ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক গভীর বার্তা বহন করে। বিচারহীনতা যখন দীর্ঘায়িত হয়, তখন ভুক্তভোগীদের আস্থার পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিও নড়বড়ে হয়ে যায়।
উখিয়ার ফোর মার্ডার মামলা আজ দেশের বিচার ব্যবস্থার এক কঠিন পরীক্ষার নাম। ছয় বছরেও যখন রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি, তখন নতুন করে প্রশ্ন জাগে—এদেশে কি সত্যিই সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার হাতের নাগালে?