প্রকাশিত: ০৩/০৭/২০২২ ৯:৪৯ এএম

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR অর্থায়নে উখিয়ায় নির্মিত বিশেষায়িত হাসপাতালটি মঙ্গলবার ৫ জুন সকালে উদ্বোধন করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত এ বিশেষায়িত হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন।মঙ্গলবার উদ্বোধনের মাধ্যমে হাসপাতালটিতে পুরোদমে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্বস্ত সুত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সুত্র মতে, হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, আরআরআরসি (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, UNHCR এর কক্সবাজার অফিস প্রধান Ms. Ita Schuette, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, WHO এর প্রতিনিধি, উখিয়ার ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।

উখিয়া কলেজের দক্ষিণ পাশে এক একর জমির উপর UNHCR বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে।স্থানীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী উভয়েই এই হাসপাতালে প্রায় বিনামূল্যে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন।

বিশেষায়িত হাসপাতালটি পরিচালনার বিষয়ে গত ৩০ জুন ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিপক্ষীয় এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা স্মারকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ কামরুল হাসান এনডিসি এবং UNHCR এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইয়োহানেস জঁন ডার ক্লাউ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এসময় কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মধ্যম পর্যায়ে অসুস্থ ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি কাজ করবে। বহিরাগত রোগীদের পরিষেবা প্রদান, যেমন-সার্জারি, ট্রমা কেয়ার, চক্ষু ও দাঁতের যত্ন, ফিজিওথেরাপি এবং উপশমকারী চিকিৎসা সেবার জন্য এই হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও ২৪ঘন্টা/৭দিন সার্বক্ষনিক জরুরী ইউনিট, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা রয়েছে এই বিশেষায়িত হাসপাতালে।

সমঝোতা স্মারক অনুসারে, হাসপাতালটি তৈরি করতে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে এবং কর্মীদের প্রাথমিক খরচ প্রদানে অবদান রাখবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।এছাড়া এই হাসপাতালের চিকিৎসা ও প্রশাসনিক সুবিধা প্রদানে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল এবং অরবিস। এই বিশেষায়িত হাসপাতালে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, স্বাস্থ্য কর্মী, টেকনিশিয়ান সহ শতাধিক লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর প্রকোপ হ্রাস পেলে উখিয়ায় ২ বছর আগে স্থাপিত ২৪০ শয্যা বিশিষ্ট SARI কোভিড হাসপাতালটি সীমিত আকারে রেখে সেটিকে বিশেষায়িত হাসপাতালটির জেনারেল ওয়ার্ড হিসাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এই বিশেষায়িত হাসপাতালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এর বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন পরিষেবার নিয়মিত ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ১৮ই জুন থেকে একই ধরনের টেলিমেডিসিন পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য।

UNHCR এর উখিয়ার এ বিশেষায়িত হাসপাতাল সম্পর্কে উখিয়া সরকারি কলেজের অধ্যাপক তৌহিদুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা উখিয়া-টেকনাফের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে বসবাসের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু উখিয়ায় UNHCR এর স্থাপিত বহুমুখী বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার অবারিত সুযোগ থাকায় স্থানীয় নাগরিকেরা এতে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এ বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থানীয়দের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ বিশেষায়িত হাসপাতালের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী হাতের নাগালে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে সহজে।

‘আমার কক্সবাজারবাসী’ উখিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী নুর মোহাম্মদ সেই সিকদার বলেন, উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করছে। এরআগে এখানে কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিলোনা। উখিয়ায় UNHCR এর স্থাপিত বিশেষায়িত এই হাসপাতাল উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নিঃসন্দেহে সহায়ক হবে। মানবাধিকার কর্মী নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এ বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থানীয় নাগরিকদের চিকিৎসা সুবিধাকে আরো অনেক সহজ করে তুলবে।

বিভিন্নক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণগত মানকে শক্তিশালীকরণ সহ এখানকার সার্বিক উন্নয়নে ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ সরকার একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নিয়ে একযোগে কাজ করছে। ২০২০ সালের জুন মাসে ইউএনএইচসিআর এর সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যা আইসিইউ এবং ৮ শয্যার এইসডিইউ চালু করা হয়। যা কোভিড-১৯ মহামারীর ক্রান্তিলগ্নে ব্যাপক অবদান রেখেছে।

তাছাড়া, ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে বর্হিবিভাগের রোগীরদের জন্য অত্যাধুনিক বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত একটি ৭ তলা ভিত বিশিষ্ট ৪ তলা ভবন নির্মাণ করছে। যার নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০% সম্পন্ন হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের মোকাবেলায় ইউএনএইচসিআর এবং অন্যান্য সংস্থা মিলে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১৪ টি কোভিড-১৯ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র এবং চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।

পাঠকের মতামত