কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হোসেনের কাছে লিখিত স্বারকলিপি প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) বেলা সাড়ে বারোটায় ইউএনও বরাবর এ অভিযোগপত্র পেশ করা হয়। প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়ে একই পরিবার থেকে টানা ৪৬ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন হেলাল উদ্দিন ও তার পিতা, মৃত মাওলানা রশিদ আহমদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে হেলাল উদ্দিন ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একই পদে বহাল রয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দীর্ঘদিন এক বিদ্যালয়ে থেকে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও, দলীয় প্রভাব এবং স্থানীয় রাজনৈতিক যোগাযোগের ফলে তিনি বদলির বাইরে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি ও শিক্ষার মানের অবনতি
অভিভাবকদের ভাষ্যমতে, হেলাল উদ্দিন নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হন না এবং পাঠদান শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যান। এর ফলে পাঠদানের মান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তার দীর্ঘ ১৬ বছরের শিক্ষাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষার্থী সরকারি বৃত্তি অর্জন করতে পারেনি। ফলে অভিভাবকদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগঃ-আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের জমি ও সম্পদের অপব্যবহার নিয়ে। বিদ্যালয়ের পাশে নিজের বাড়ি থাকায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টির একটি অংশ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন ছাত্ররা। কেউ কেউ জানিয়েছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কাজে লাগানো হয়, যা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। প্রাক্তন ছাত্র এডভোকেট সরওয়ার আলম অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন জমির অন্তত ৫০ শতাংশ এখন হেলাল উদ্দিনের বাড়ির আওতায় পড়ে গেছে। বিদ্যালয় যেন তার খামারবাড়িতে রূপ নিয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের ৫৫ বছরের মাদার ট্রি ৩টি অন্যান্য একাশি বেলজিয়াম বড় দুটিসহ ৫টি গাছ তিনি বেআইনিভাবে কর্তন করে অর্থ আত্নসাৎ করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, প্রধান শিক্ষক ছাড়পত্র ও অন্যান্য নথিতে স্বাক্ষরের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেন। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজের ইচ্ছামতো গঠন করছেন। বর্তমানে তার ছোট ভাই সাহাব উদ্দিন বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যেটি সম্পূর্ণ অনিয়ম বলে স্থানীয়দের দাবি। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের ৫৫ বছরের পুরনো বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করেছেন তিনি, এবং এনজিও থেকে পাওয়া শিক্ষা উপকরণ আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠাতার নাম পরিবর্তনের অভিযোগঃ-বিদ্যালয়ের মূল জমিদাতা হাজি মকবুল আলী মুন্সির নাম ফলক থেকে অপসারণ করে সেখানে হেলাল উদ্দিন তার পিতা রশিদ আহমদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে জানায় এলাকাবাসী। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। এই বিষয়ে উখিয়ার ইউএনও কামরুল হোসেন বলেন, প্রাক্তন ছাত্র, অভিভাবক ও স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম সিরাজীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও স্কুল পরিদর্শন করব। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম সিরাজী বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, কালই তদন্তে যাচ্ছি। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। উখিয়ার উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একসময় স্থানীয় শিক্ষার আশার আলো ছিল। বর্তমানে যেভাবে অভিযোগ ও অনিয়মের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে, তা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি স্থানীয়দের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের কঠোর ও দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা পায়।