অর্থ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেলো কক্সবাজারের ‘উখিয়া বিশেষায়িত’h হাসপাতাল। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগণ এবং ৩৩টি ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এনজিও, আইএনজিও কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালটি চালু করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছে ৫ লাখের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক। কিন্তু তাদের চিকিৎসাসেবায় আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় ছুটতে হতো কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল বা চট্টগ্রামে। তাই এ সমস্যা সমাধানে ২০২২ সালের জুলাই মাসে চালু হয় ‘উখিয়া বিশেষায়িত’ হাসপাতাল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে চালু হওয়া ৬০ কক্ষ বিশিষ্ট এই বিশেষায়িত হাসপাতালে ছিল সার্জারি, ট্রমা কেয়ার, চক্ষু ও দাঁতের যত্ন, ফিজিওথেরাপি এবং উপশমকারী চিকিৎসা সেবার সব ধরনের ব্যবস্থা। এছাড়া ছিল সার্বক্ষনিক জরুরী ইউনিট, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা। যা মিলতো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে গত ১৪ মে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ‘বিশেষায়িত হাসপাতালটি’। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক চিকিৎসাসেবা সরঞ্জাম। শুধুমাত্র চুরি ঠেকাতে দায়িত্বপালন করছে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী।
উখিয়া বিশেষায়িত হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রতিদিনই ৭’শ থেকে ৪’শ রোগী চিকিৎসা সেবা পেত। কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে, শুধুমাত্র আমরা ১০ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছি। তবে প্রতিদিনই রোগী আসছে, বন্ধ শুনে কক্সবাজারে চলে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালটি বন্ধ রয়েছে তা জানেন না অনেক স্থানীয় বাসিন্দাসহ রোহিঙ্গারা। প্রতিদিনই চিকিৎসাসেবা নিতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। তাদের দাবি, খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ায়।
টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং থেকে আসা রোগী মোশাররফ হোসেন বলেন, পায়ের সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে উখিয়ার হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু গেইট বন্ধ, নিরাপত্তারক্ষী বলেছে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হবে।
উখিয়ার ডিগলিয়াপালং থেকে আসা রোগী অর্পণা বড়ুয়া বলেন, হাসপাতালটা কাছে ছিল চিকিৎসা পেতাম। কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কক্সবাজার যাওয়া-আসাটা কষ্ট হয়ে পড়বে। প্রশাসনের উচিত এই অঞ্চলের মানুষের জন্য হাসপাতালটি পুনরায় চালু করা।
এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে বুঝিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বলছে, বিশেষায়িত হাসপাতালটি ফের চালু করতে সবধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, উখিয়া বিশেষায়িত হাসপাতালে ৯৫ শতাংশ স্থানীয় লোকজন সেবা পেত। এটা আমাদের জন্য বড় একটা সংকটের বিষয় হয়ে গেল। এতো সুন্দর করে সেবা দেয়া হতো, যেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু জাতিসংঘ বলে দিয়েছে এটা তাদের পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এটা আমাদেরকে হস্তান্তর করে দিয়েছে। কোন রকম অনুরোধ করে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়েছে জুন পর্যন্ত। যাতে কোন কিছু চুরি হয়ে না যায়। তবে এনজিও, আইএনজিও কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষায়িত হাসপাতালটি ২০২২ সালে ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ ও সজ্জিত করা হয়। পরে দাতা সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের ব্যবস্থাপনায় আরও আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছিল।