কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অফিস, এনজিও সংস্থা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ভাড়াবাসাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। কিছু স্থানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অচল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সামান্য অগ্নিকাণ্ড দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে—বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন, তদারকি ও লাইসেন্স নবায়নের কথা বললেও গত দেড় বছর ধরে তেমন কোনো কার্যকর নজরদারি দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রশিক্ষণে শুধু কাগুজে সচেতনতার প্রদর্শনী চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। দেশি-বিদেশি প্রায় দেড় শতাধিক উন্নয়ন সংস্থার অফিসের মধ্যেও বেশিরভাগ জায়গায় এসব সরঞ্জাম অনুপস্থিত। কোথাও কোথাও যন্ত্র থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ বা অকার্যকর।
উখিয়া সদর, কুতুপালং, পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী, কোটবাজার, সোনারপাড়া ও মরিচ্যা—এই আটটি বাজারে প্রায় সাড়ে চার হাজার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫০০ দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাওয়া গেছে; বাকি ৪ হাজার দোকান সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে। এছাড়া রোহিঙ্গা আগমনের পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বড় বড় ভবনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভাড়ায় বসবাস করছেন। এসব ভবনেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও বেশ কয়েকটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে পালংখালী তাজমান হাসপাতাল, কুতুপালং আলিফ হাসপাতাল, পালং জেনারেল হাসপাতাল, উখিয়া সেঞ্চুরি ল্যাব, কোটবাজার অরিজিন, ডিজিটাল, অরিয়ন হাসপাতাল ও পালং নার্সিং ইনস্টিটিউটেও একই অবস্থা—যন্ত্র আছে, কিন্তু অনেকটাই অকার্যকর। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন এসব বিষয় “দেখেও না দেখার” ভান করছেন।
সাম্প্রতিক ১০ নভেম্বর বিদ্যুৎ সার্কিটের ত্রুটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে উখিয়ার দারোগাবাজারে ১৬টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখানে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ এসময় এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়৷ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পুরো বাজারে একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও ছিল না। ফলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷
কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ এমরান বলেন, আমরা এখানে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকি। দোকানপাট, অফিস বা ভাড়াবাসা— কোথাও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। ছোট একটা আগুন লাগলেও তা মুহূর্তেই বড় আকার ধারণ করে। কর্তৃপক্ষের উচিত নিয়মিত তদারকি করা, নইলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।
দারোগা বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আমাদের বাজারে প্রায় ৪ শতাধিক দোকান আছে, কিন্তু একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও নেই। গত ১০ নভেম্বরের অগ্নিকাণ্ডে আমরা চোখের সামনে দোকান পুড়তে দেখেছি, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। প্রশাসন যদি আগে থেকেই সচেতনতা ও সরঞ্জাম নিশ্চিত করত, এত ক্ষতি হতো না।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান চৌধুরী বলেন, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম না থাকা সত্যিই উদ্বেগজনক। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বারবার সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছি। ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকদের দায়িত্বশীল হতে হবে, পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকেও নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা ডলার ত্রিপুরা বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজার পরিদর্শন করি এবং নির্দেশনা দিই। অনেক প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা মানলেও অনেকেই তা অগ্রাহ্য করে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন বাধ্যতামূলক, এবং যারা নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম না থাকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসকে নিয়ে যৌথভাবে অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকান, হাসপাতাল ও ভাড়াবাসায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে স্থাপন নিশ্চিত করা হবে। এখনো একটি ডিআরআর মিটিংয়ে আছি সেখানেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিষয়ে কথা বলেছি৷ মিটিং শেষ করে আপনাকে ফোন দিচ্ছি বলে মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন৷