উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩/০২/২০২৩ ৯:১৪ এএম

দুই ছেলের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় এবার মুখ খুললেন ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি বলেন, আমার মুখ খোলাবেন না। মুখ খুললে অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি ভেসে আসি নাই। মাইজভান্ডারের দিকে যারাই অসৎ উদ্দেশ্য হাত দিয়েছে তাদের হাত পুড়ে গেছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আধ্যাত্বিক পীর হযরত সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারীর (রহ.) খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি ।

তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে মাজার ও স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা এখন ১৪ দলীয় জোটে ভিড়তে চাইছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি বলেই ঐ গোষ্ঠীটি আমার পেছনে লেগেছে। মূলত এদের প্রধান টার্গেট তরিকত ও পীর আউলিয়াদের মাজার শরীফ ধ্বংস করে দেওয়া।

৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ/ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
তিনি বলেন, জামায়াত ও রাজাকারদের ব্যাপারে সবাই যখন চুপ ছিল, কারো সাহস হয়নি। আমিই তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। সমান তালে রাজপথেও প্রতিবাদ করে গেছি। যা অনেকে রাতারাতি ভুলে যাচ্ছেন।

দুদকের মামলার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে রিট করার ঘোষণা দিয়ে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমি দুদকের বিরুদ্ধে রিট করবো। দুদকের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করবো কারণ আমরা পরিষ্কার। আমি ও আমার ছেলেদের জন্য মাইজভান্ডার দরবার শরীফ কলংকিত হবে, তার চেয়ে মরে যাওয়ায় ভালো।

তিনি বলেন, দুদক মাইজভান্ডার ও তরিকত বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে নজিবুল বশর বলেন, ঋণ নেয়া ৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে দিলে কি আর টাকা আত্মসাত থাকে? ওই মামলায় ৬৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে যা দুদক তা গোপন করেছে। ‘দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে চিনে নাই’।

এছাড়াও তিনি দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হককেও কড়া হুশিয়ারি প্রদান করে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বলেছিলাম মাইজভাণ্ডারী আশেক ভক্তদের বললে আপনার বাড়ির একটা ইটও থাকবে না। দুদক কমিশনারকেও সেটা বলতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের কোন শত্রু নাই। কেউ শত্রুতামি করতে গেলে আগে বিনাশ হয়ে যায়।

সরকারের সাথে তাঁর কোন বিরোধ নেই উল্লেখ করে এই সাংসদ বলেন, আমি চৌদ্দ দলীয় জোটে আছি এবং থাকবো। আমার সিট আমি ঠিক করি। সরকারও জানে। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, আমি ভেসে আসি নাই। মাইজভান্ডারের দিকে যারাই অসৎ উদ্দেশ্য হাত দিয়েছে তাদের হাত পুড়ে গেছে।

ছৈয়দ তৈয়বুল বশর তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তরিকতপন্থীদের থামিয়ে দিতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে উঠে পড়ে লেগেছে। এটি সেই ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ মাত্র। সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এই চক্রটির মুখোশ শীঘ্রই উন্মোচন করা হবে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন তরিকত ফেডারেশনের এ নেতা।

তিনি বলেন, ঐক্য হওয়ার সময় এসেছে আজ আমার বিরুদ্ধে কাল আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। তাই বসে থাকলে হবে না সকল তরিকতপন্থীদের ঐক্য হওয়ার আহবান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এই ভুয়া মামলায় কি হবে জানিনা তবে যে কোন সময় যে কোন প্রান্তে ডাক আসলে আপনারা ছুটে আসবেন।

সৈয়দ হাবিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ছেলে সৈয়দ মাহতাবুল বশর মাইজভান্ডারী ও সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী।

উল্লেখ্য, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী ও তার ভাই সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ ১৪ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, তার ছেলে কে এম রাকিব হোসেন এবং আত্মীয় খন্দকার মো. মোস্তাহিদ, বর্তমান পরিচালক মুসলিমা শিরিন, জেড এম কায়সার, মো. অলিউজ্জামান, এম শাহাদত হোসেন কিরন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলশান আরা হাফিজ ও অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট তাজরিয়ান হক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান কবির খান ও সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রেজাউল হক।

এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দুদক। পরে সংস্থাটি একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলে ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অন্যরা মিলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার কথা উল্লেখ করা হয়।

পাঠকের মতামত