
জ্বলন্ত ঘরবাড়ি আর প্রিয়জনের লাশ পেছনে ফেলে শরণার্থীদের সেই ঢলের পর পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে তাদের বাসভূমে ফেরত পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এই সময়ে এই বাংলাদেশেই জন্ম নিয়েছে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু; তাতে বাংলাদেশের ওপর তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের সেই অনিশ্চিত যাত্রার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে বৃহস্পতিবার।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেই ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট; এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এরপর আসে করোনাভাইরাস মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগে ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সঙ্কটের মধ্যেই গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সু চির দ্বিতীয় দফার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং।
এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আর সেভাবে আলোচনায় নেই।
সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের কয়েক দিন আগে চীনের নেতৃত্ব প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছিল। তার চূড়ান্ত ফল আর পাওয়া যায়নি। ওই সময় বাংলাদেশ আশা করেছিল, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হয়ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকারে রাখা বাংলাদেশ সরকার বারবার অভিযোগ করে আসছে, আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের এক বছরের মাথায় চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে নবগঠিত ‘অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পার্সনস ফ্রম রাখাইন’ এর বৈঠক হয়।
এরপর গত ১৪ জুন হয় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) সভা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব চ্যান আয়ে বৈঠকে নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, মিয়ানমারের তা যাচাই করে দেখার কথা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনও ওই পর্যন্তই।
”জেডব্লিউজির বৈঠকের আগ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক তথ্য মিয়ানমারের কাছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫৮ হাজারের কিছু বেশি মানুষকে যাচাইবাছাই করার করার কথা জানিয়েছে তারা।”
দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকলেও চলতি বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আশা প্রকাশ করেছে সরকার।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশকে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করা অনেক ‘বড় চাপ’।
“সে কারণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা এখনো আশাবাদী যে, বছরের শেষে বা বছর শেষের আগে হয়ত শুরু করতে পারব।”
প্রতি বছর বাড়ছে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা
কক্সবাজারের ক্যাম্পে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার করে শিশুর জন্ম হচ্ছে; রোহিঙ্গাদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে আসছে সরকার।
রোববার জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গসংস্থাগুলোর সঙ্গে টাস্কফোর্সের সভাতেও ইউএনএফপিএ এর প্রতি এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, “ইউএনএফপিএ এর যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আছে, সেটা আরও জোরদার করার জন্য আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি। এবং তারাও অচিরে কাজ শুরু করবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইউএনএফপিএ এর মধ্যে তৈরি করা নীতিগত দলিল ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ওই দলিল দ্রুত অনুমোদন করে কার্যক্রম শুরুর পর্যায়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের ৫ বছর: আটকে প্রত্যাবাসন, চিন্তা বাড়াচ্ছে জন্মহার
ঢাকা সফরে আসা ইউএনএফপিএ এর আঞ্চলিক পরিচালককেও ক্যাম্পে পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদারের বিষয়ে বলা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “প্রতি বছর যে ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে, এতে করে ওভারঅল পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে।”
সব মিলে ক্যাম্পের জনসংখ্যা কত বেড়েছে, এ প্রশ্নে সচিব বলেন, “১১ লাখের একটা আনুমানিক হিসাব আছে। যেহেতু ৩০ হাজার করে বাড়ছে। যদি চার বছর ধরি, তাহলে ইতোমধ্যে এক লাখের উপরে যোগ হয়েছে।
”এখানে তো সেভাবে শুমারি হয় নাই, সংখ্যাটা আনুমানিক। যেহেতু ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে সংখ্যাটা (১১ লাখের চেয়ে) একটু বেশিই।”
ঘটনাপ্রবাহঃ রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছর
রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করবে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৫/০৮/২০২২ ৭:৩৮ পিএমমিয়ানমারে নির্যাতন ধর্ষন ও গণহত্যার বিচার চেয়ে অঝোর কাঁদছে রোহিঙ্গা নারী পুরুষ
২৫/০৮/২০২২ ৪:২৯ পিএমরোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ঢাকার দূতাবাসগুলোর অঙ্গীকার
২৫/০৮/২০২২ ১২:০৪ পিএমরোহিঙ্গা ইস্যুকে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রাধিকার দিতে হবে
২৫/০৮/২০২২ ৬:৪৯ এএমরোহিঙ্গারা দখলে নিচ্ছে ব্যবসা, শ্রমবাজার
২৫/০৮/২০২২ ৬:০৩ এএমদ্রুত টেকসই প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৫/০৮/২০২২ ৬:০০ এএমমায়ানমারের উপর চাপ তৈরিতে জাতিসংঘকে সফল হতেই হবে
২৪/০৮/২০২২ ৭:১০ পিএমরোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর: ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ধীর গতি
২৪/০৮/২০২২ ৬:৫৯ পিএমরোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ গ্রেপ্তার ১
২৪/০৮/২০২২ ৫:৫৮ পিএমবাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে?
২৪/০৮/২০২২ ১২:২৭ পিএম২৫ আগস্ট সেই স্মৃতিময় দিনগুলি আমাদের কাঁদায়
২৪/০৮/২০২২ ১১:১৯ এএমকক্সবাজারে আটক ১১ রোহিঙ্গা বিমানযাত্রী নিয়ে তোলপাড়
২৪/০৮/২০২২ ৭:৩০ এএমকথা রাখেনি মিয়ানমার প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত
২৪/০৮/২০২২ ৭:২১ এএম‘এ বছর রোহিঙ্গা সহায়তা তহবিলের অর্ধেকও জোগাড় হয়নি’
২৪/০৮/২০২২ ৭:১৫ এএমরোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা
২৪/০৮/২০২২ ৭:০৩ এএম
পাঠকের মতামত