প্রকাশিত: ০৪/০১/২০২২ ৬:০৩ পিএম

কক্সবাজারে এক নারী পর্যটককে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণে’র ঘটনার তদন্ত চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেন, ‘তদন্তকালে বিভিন্ন আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য কাম্য নয়। ভুক্তভোগী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এই পর্যায়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দুঃখজনক। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এলে পরে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন হলেও মানুষের মনে নানা রকম ধারণা হতে পারে।’

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে তদন্ত চলাকালে গণমাধ্যমে আইনশৃঙখলা বাহিনী যাতে বক্তব্য না দেয়, সে বিষয়টি পুলিশ মহাপরিদর্শককে অবহিত করতেও হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দেন।

ফলো করুন-
এর আগে সোমবার কক্সবাজারে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট একটি রিট দায়ের করা হয়।

মঙ্গলবার ওই রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। তবে তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের কথা কম বলাই ভালো।’

এরপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রিটটি আপাতত স্ট্যান্ডওভার (শুনানি মুলতবি) রাখেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভুইয়া রাসেল ও রাশিদা চৌধুরী জনস্বার্থে কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রিটটি দায়ের করেন। আদালতে রিটের পক্ষে আবদুল্লাহ আল হারুন ভুইয়া ও রাশিদা চৌধুরী শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

শুনানিতে রিট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘কক্সবাজারের ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাবের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে। তাই ২২ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাচ্ছি। তখন আদালত বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগী জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি আইনের কোথায় আছে?’

তখন আইনজীবী বলেন, ‘ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্ট আছে।’

এ পর্যায়ে আইনজীবীকে ওই আইনটি খতিয়ে দেখতেও পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।

কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

‘ধর্ষণের শিকার’ ২৫ বছর বয়সী ওই নারীর অভিযোগ, সংঘবদ্ধ একটি চক্র গত ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে তাকে ‘তুলে নেয়’। চক্রটি তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ‘কয়েক দফা ধর্ষণ করে’। পরে খবর পেয়ে জিয়া গেস্ট ইন নামের এক হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

পরদিন ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিক, ২ নম্বর আসামি ইসরাফিল হুদা জয়সহ এজাহারভুক্ত চার আসামি এবং সন্দেহভাজন হিসেবে আরও তিনজনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙখলা বাহিনী।

তাদের গ্রেপ্তারের আগে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আশিকের সঙ্গে ওই নারীর আগে থেকেই পরিচয় ছিল, যদিও ওই নারী তা অস্বীকার করেছেন।

সমকাল

পাঠকের মতামত