প্রকাশিত: ২২/০৬/২০১৭ ৮:১৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৫৪ পিএম

ঢাকা : রাজধানীতে ঈদ ঘিরে বেপরোয়া হিজড়ারা। রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে তারা। কেউ-ই ছাড় পাচ্ছেন না তাদের থেকে। অন্য সময় কোনোভাবে বুঝিয়ে ওদের থেকে কেটে পড়া যেত। এখন সেই উপায় নেই, জাপটে ধরে রাখে চার-পাঁচ জনের গ্রুপ। টাকা না দিলে তাদের নাকি বিয়ে করতে হবে।

যাত্রাবাড়ীতে দেখা মিলে আখিঁ-মুক্তা নামে হিজড়াদের একটি গ্রুপ। গ্রুপটি রাসেল নামে এক যুবককে ঘিরে বলছে, ‘দাও, টাকা দাও। দিতে বলছি শুনছো না? অদ্ভুত হাততালি দিয়ে, এই… দেনা রে…। টাকা দাও, নয় বিয়ে কর, তাইলে আর কারো কাছে টাকা চাবো না, ঘরে বসেই খাবো, তুমি খাওয়াবা।’

এই যুবক আখিঁ-মুক্তাদের মাঝে বেকায়দায় পড়ে যান। কোনো উপায় না পেয়ে ১০ টাকা বের করেন তিনি। ১০ টাকায় রক্ষা হয়নি, শেষে ১০০ টাকায় এবারের মতো ছাড়া পান তিনি। সামনে হয়তো এরকম আরেকটি দলের হাতে পড়তে পারেন!

রাসেল বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যাই, কেউ কোনো অপরাধের প্রতিবাদ করেন না। ১২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। অফিস থেকে বাসায় আসা-যাওয়া ২০ টাকা। রোজা রেখেছি, ১০০ টাকা ইফতার খরচ রেখেছি, সেটা নিয়ে গেল।’

‘এই দেনা রে’ সম্বোধন ও অদ্ভুত হাততালি, অশালীন আচরণ হিজড়াদের স্বভাবজাত। চার-পাঁচজন করে দলে বিভক্ত হয়ে হানা দিচ্ছে তারা। দাবি করা চাঁদা না দিয়ে ছাড় নেই কারোর।

ঈদ ঘিরে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি যেন লাগাম ছেড়েছে। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস সব জায়গায় চলছে তাদের জোর-জবরদস্তি। চাহিদার থেকে কম দিলেই অশালীন কথা, দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানেগুলোতে হাত দিতে শুরু করে হিজড়ারা। এতে চক্ষু লজ্জায় টাকা দিয়ে বিদায় করতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের সামনে দেখা গেলো একটি ফলের দোকান একদল হিজরা ঘিরে রেখেছে। তাদের চাহিদা ঈদের বকশিসসহ একশ টাকা, দোকানদার ৫০ টাকা দিলে হিজড়ারা রাস্তায় ছুড়ে মারলো টাকা। দোকানদার বাধ্য হয়ে রাস্তা থেকে টাকা তুলে নিয়ে একশ টাকা দিয়েই বিদায় করলো হিজড়াদের। ১০০ টাকার সঙ্গে দোকানের দুটি আমও হাতে করে নিয়ে গেল হিজড়ারা।

দোকানদার সুমন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা করে ওদের দিতাছি, তার পরও ঈদের কথা বলে ১০০ টাকা দাবি করছে, সকাল থেকে বিক্রি করতে পারলাম না, অথচ জরিমানা দিলাম। ওরা (হিজড়া) দোকানে আইলেই টাকা নিবে সঙ্গে ফলও হাতে করে লইয়া যায়, ওদের থেকে রেহাই দিবে কে বলেন?’

জানা যায়, যাত্রাবাড়িতে রাস্তার দুই পাশে হিজড়াদের আলাদা দল সাপ্তাহিক চাঁদা তুলে। তাদের গ্রুপ ভিত্তিক অলিখিত চাঁদার এলাকা নির্ধারন করা রয়েছে। যাত্রাবাড়ি, জুরাইন, পোস্তগোলা, শ্যামপুরেও এভাবে চাঁদা দিচ্ছেন স্থানীয়রা, প্রত্যেক এলাকায় দোকান ছাড়াও কোনো কোনো অফিস থেকেও নিয়ম করে চাঁদা তুলছে হিজড়ারা। কারো বাসা-বাড়িতে সন্তান জন্মের খবর পেলেই ঢোল নিয়ে চার থেকে পাঁচজনের হিজড়ার দল হানা দেয়। তারা চাঁদা দাবি করে ৫ হাজার টাকা। এই টাকা না পেলে ঢোল বাজিয়ে, হাততালি আর অশালীন কথায় হট্টগোল বাঁধিয়ে দেওয়া হয় বাসায়।

পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা রিনা। চাকরি করেন কাকরাইলের একটি অফিসে হিসাব নিরীক্ষক বিভাগে। তিনি নতুন সময়কে বলেন, ‘আমার সন্তান জন্মের এক মাসের মাথায় বাড়িতে চারজনের হিজড়ার দল আসে। এসেই দাবি পাঁচহাজার টাকা, এক হাজার টাকা দেওয়ার পরও নাছোড়বান্দা, পরে দুই হাজার টাকা মিলিয়ে দিয়ে বললাম আমাদের কাছে আর টাকা নেই, সেদিন অনেক কষ্টে হিজড়া থেকে রেহাই পায়।’

জানা যায়, কদমতলী থানার বরইতলা এলাকাতে রাজধানীর অধিকাংশ হিজড়ার বাস। এই এলাকায় চাঁদা তোলার নেতৃত্ব দেয় শাবনুর, কলি, চাম্পা, শিপন হিজড়া।

কাকরাইল বাংলাদেশ এক্সপোর্ট কর্পোরেশন অফিসে সোমবার ঈদ ‘উপলক্ষে’ হানা দেয় এক দল হিজড়া। প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটর হাছান বলেন, ‘সোমবার আমি অফিসে ছিলাম না, এসেই শুনলাম অফিসে হিজড়া এসে ৫০০ টাকা নিয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের অফিস সহকারী বলেন, ‘অফিসের ভেতরে তিনজন হিজড়া ঢুকে আমার গায়ে হাত দেয়, হাতে তালি দেয় ও একজন সোফায় বসে পড়ে। দুইশত টাকা দিলাম হিজড়ারা ছুড়ে ফেলে দিলো, পরে ৫০০ টাকা দিয়ে রক্ষা পাই।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু তালেব মোয়াজ্জেম হোসেন নতুন সময়কে বলেন, হিজড়ারা বৃহৎ সম্প্রদায় ও স্পর্শকাতর বিষয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এদের নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও এদের পুনর্বাসনে কাজ করবে। আমরা ভ্রাম্যমাণ হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে তাদের পুনর্বাসনেও কাজ করা হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার ইব্রাহীম খান নতুনসময়কে বলেন, হিজরাদের এ চাঁদাবাজি এক ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। রমজানের আগে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর বৈঠক হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পেলে পুলিশকে জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনগনকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে, তবেই এটা নির্মুল সম্ভব।

পাঠকের মতামত

চাঁদাবাজির অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে রামু যুবদল নেতার এলোপাতাড়ি গুলি

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনীর কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত ...

অস্ত্র কেনাবেচায় বিকাশ লেনদেন, কক্সবাজারে র‌্যাবের জালে তিন কারবারি

পর্যটনকেন্দ্রিক শহর কক্সবাজারের আড়ালে গড়ে উঠছে অস্ত্র কারবারিদের গোপন নেটওয়ার্ক। মাদক, মানবপাচার ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ...