উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮/০২/২০২৩ ১১:২৮ এএম
দৃশ্যমান রেল পথ

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের জুন বা ডিসেম্বর নাগাদ রেলপথটি দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দ্রুতগতির টুরিস্ট ট্রেন চলাচল চালু করার উদ্দেশ্য থেকে হাতে নেয়া হয়েছিল প্রকল্পটি। কিন্তু বর্তমানে এটি সময়মতো চালু করা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করছে রেলওয়ের চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনের পুরনো রেলপথ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতু। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশের পুরনো মিটার গেজ রেলপথটি দিয়ে ট্রেন চলবে ধীরগতিতে। রেলওয়ের এ সেকশনের পরিচালন সক্ষমতাও কম। সেকশনটির পরিচালন সক্ষমতা আরো কমিয়ে দিয়েছে কালুরঘাট সেতু।

যদিও বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে দোহাজারী-চট্টগ্রাম সেকশনটি শক্তিশালী করে সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। একই ভাবে কালুরঘাট সেতুর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনের বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনকে ডুয়াল গেজ লাইনে রূপান্তর এবং কালুরঘাট সেতুটি নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব কাজ শেষ হবে ২০২৬ বা ২০২৭ সালের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থায়ীভাবে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথটির উন্নয়ন এবং কালুরঘাট সেতু নতুন করে নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা বিঘ্নিত হবে। এ কারণে ঢাকা-কক্সবাজারের মধ্যে দ্রুতগতির টুরিস্ট ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশে তা কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলাচল করতে পারবে না।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটির দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ। এ অংশে মিটার গেজ ও ডুয়াল গেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলতে পারে। টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার অংশ আবার মিটার গেজ। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার অংশ ডুয়াল গেজ করার কাজ চলমান। লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১২৯ কিলোমিটার অংশ আবার মিটার গেজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথটির সিংহভাগ অংশ মিটার গেজ থাকায় রেলপথটিতে ব্রড গেজের কোনো ট্রেন চলতে পারে না। ফলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি ট্রেন পরিচালনাও সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরো রেলপথটি ডুয়াল গেজে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন করে ১০০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। সেকশনটি ডুয়াল গেজ হলেও চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযোগ রেলপথটি মিটার গেজ হওয়ায় বর্তমানে শুধু মিটার গেজ ট্রেনই চলতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দোহাজারী-কক্সবাজারের মধ্যে সংযোগ রেলপথটির দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথটি বর্তমানে বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেকশনটিতে বর্তমানে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও একটি তেলের গাড়ি। রেলপথটির অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে চলাচলরত ট্রেনগুলো গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে।

যদিও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যেসব টুরিস্ট ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেগুলোর পরিচালন গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রড গেজ ট্রেনের জন্য ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার আর মিটার গেজ ট্রেনের জন্য ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এ অংশ ডুয়াল গেজ করা না হলে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল করিডোরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডোরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর এবং চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে ঢাকার দিকে সংযোগ রেলপথ স্থাপন’ শীর্ষক প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের ওপর এক সভায় এমন মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলছেন, ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশন এবং এ সেকশনে বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুর কারণে ঢাকা-কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না।’ এ সম্পর্কে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা আগামী জুন বা ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিচালনা শুরুর লক্ষ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশ যেন এ পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে সেকশনটির উন্নয়ন করা হচ্ছে। একইভাবে কালুরঘাট সেতুরও উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন রেলপথ ও সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ অংশে ট্রেন কিছুটা ধীরগতিতে চললেও তা খুব বেশি সমস্যা তৈরি করবে না।’ সুত্র: বণিক বার্তা

পাঠকের মতামত